পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ - হীরা এমত সময়ে হরিদাসী বৈষ্ণবী আসিয়া গান করিল। “কঁাট বনে তুলতে গেলাম কলঙ্কের ফুল, গো সখি কাল কলঙ্কেরি ফুল । মাথায় পরলেম মালা গেঁথে, কাণে পরলেম ফুল। সখি কলঙ্কেরি ফুল।” এ দিন সূৰ্য্যমুখী উপস্থিত। তিনি কমলকে গান শুনিতে ডাকিতে পাঠাইলেন। কমল কুনাকে সঙ্গে করিয়া গান শুনিতে আসিলেন। বৈষ্ণবী গায়িতে লাগিল। “মরি মর্ব কাটা ফুটে, ফুলের মধু খাব লুটে, খুজে বেড়াই কোথায় ফুটে, নবীন মুকুল।” কমলমণি ভ্ৰভঙ্গ করিয়া বলিলেন, “বৈষ্ণবী দিদি—তোমার মুখে ছাই পড়ক—আর তুমি মর। আর কি গান জান না ?” হরিদাসী বলিল, “কেন ?” কমলের আরও রাগ বাড়িল ; বলিলেন, “কেন ? একটা বাবলার ডাল আন ত রে—কাটাফোট কত সুখ মাগীকে দেখিয়ে দিই।” সূৰ্য্যমুখী, মৃদুভাবে হরিদাসীকে বলিলেন, “ও সব গান আমাদের ভাল লাংে মা – গৃহস্থবাড়ী ভাল গান গাও।” হরিদাসী বলিল, “আচ্ছা।” বলিয়া গায়িতে আরম্ভ করিল, “স্মৃতিশাস্ত্র পড়ব আমি ভট্টাচার্য্যের পায়ে ধোরে। ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম শিখে নিব, কোন বেটী বা নিন্দে করে।” কমল ভ্ৰকুটি করিয়া বলিলেন, “গিল্পী মশাই—তোমার প্রবৃত্তি হয়, তোমার বৈষ্ণবীর গান তুমিই শোন, আমি চলিলাম।” এই বলিয়া কমল চলিয়া গেলেন—সূৰ্য্যমুখীও মুখ অপ্রসন্ন করিয়া উঠিয়া গেলেন। আর আর স্ত্রীলোকেরা আপন আপন প্রবৃত্তি মতে কেহ উঠিয়া গেল, কেহ রহিল ; কুন্দনন্দিনী রহিল। তাহার কারণ, কুন্দনন্দিনী গানের মর্শ কিছুই বুঝিতে পারে নাই—বড় শুনেও নাই—অন্তমনে ছিল, এই জন্য যেখানকার সেইখানে
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।