সপ্তদশ পরিচ্ছেদ : যোগ্যং যোগ্যেন যোজয়েৎ (€) কুন্দ বলিল, “না।” তখন নগেন্দ্ৰ যেন সহস্ৰমুখে, অপরিমিত প্রেমপরিপূর্ণ মৰ্ম্মভেদী কত কথা বলিলেন। কুন্দ বলিল, “না।” ● তখন নগেন্দ্র চাহিয়৷ দেখিলেন, পুষ্করিণী নিৰ্ম্মল, সুশীতল—কুসুম-বাস-মুবাসিত— পবনহিল্লোলে তন্মধ্যে তার কঁাপিতেছে,—ভাবিলেন, “উহার মধ্যে শয়ন কেমন ?” অন্তরীক্ষে যেন কুন্দ বলিতে লাগিল, “ন।” বিধবার বিবাহ শাস্ত্রে আছে। তাহার জন্য নয়। তবে কুন্দ ডুবিয়া মরিল না কেন ? স্বচ্ছ বারি—শীতল জল—নীচে নক্ষত্র নাচিতেছে—কুন্দ ডুবিয়া মরিল না কেন ? সপ্তদশ পরিচ্ছেদ যোগ্যং যোগ্যেন যোজয়েৎ হরিদাসী বৈষ্ণবী উপবনগৃহে আসিয়া হঠাৎ দেবেন্দ্রবাবু হইয়া বসিল । পাশে একদিকে আলবোলা। বিচিত্র রৌপ্যশৃঙ্খলদলমালাময়ী, কলকল-কল্লোলনিনাদিনী, আলবোলা সুন্দরী দীর্ঘ ওষ্ঠ চুম্বনাৰ্থ বাড়াইয়া দিলেন—মাথার উপর সোহাগের আগুন জ্বলিয়া উঠিল। আর একদিকে স্ফটিকপাত্রে, হেমাঙ্গী একৃশাকুমারী টল টল করিতে লাগিলেন । সম্মুখে, ভোক্তার ভোজনপাত্রের নিকট উপবিষ্ট গৃহমার্জারের মত, একজন চাটুকার প্রসাদাকাঙ্ক্ষায় নাক বাড়াইয়া বসিলেন । হুঙ্কা বলিতেছে, “দেখ ! দেখ ! মুখ বাড়াইয়া আছি ! ছি:! ছি ! মুখ বাড়াইয়া আছি ! একৃশাকুমারী বলিতেছে, “আগে আমায় আদর কর । দেখ, আমি কেমন রাঙ্গা ! ছি ছি ! আগে আমায় খাও!” প্রসাদাকাঙ্ক্ষীর নাক বলিতেছে, “আমি যার, তাকে একটু দিও।” দেবেন্দ্র সকলের মন রাখিলেন। আলবোলার মুখচুম্বন করিলেন—তাহার প্রেম ধুয়াইয়া উঠিতে লাগিল। একৃশানদিনীকে উদরস্থ করিলেন, সে ক্রমে মাথায় উঠিতে লাগিল। গৃহমার্জার মহাশয়ের নাককে পরিতুষ্ট করিলেন—নাক তুই চারি গেলাসের পর ডাকিতে আরম্ভ করিল। ভূত্যের নাসিকাধিকারীকে “গুরুমহাশয় গুরুমহাশয়” করিয়া স্থানান্তরে রাখিয়া আসিল। তখন সুরেন্দ্র আসিয়া দেবেন্দ্রের কাছে বসিলেন এবং তাহার শারীরিক কুশলাদি জিজ্ঞাসার পর বলিলেন, “আবার আজি তুমি কোথায় গিয়াছিলে ?”
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।