68 বিষবৃক্ষ দে। ইহারই মধ্যে তোমার কাণে গিয়াছে ? - স্ব। এই তোমার আর একটি ভ্রম। তুমি মনে কর, সব তুমি লুকিয়ে কর— কেহ জানিতে পারে না, কিন্তু পাড়ায় পাড়ায় ঢাক বাজে। দে। দোহাই ধৰ্ম্ম! আমি কাহাকেও লুকাইতে চাহি না—কোন শালাকে লুকাইব ? স্ব। সেও একটা বাহান্থর মনে করিও না। তোমার যদি একটু লজ্জা থাকিত, তাহা হইলে আমাদেরও একটু ভরসা থাকিত। লজ্জা থাকিলে আয় তুমি বৈষ্ণবী সেজে গ্রামে গ্রামে ঢলাতে যাও ? দে। কিন্তু কেমন রসের বৈষ্ণবী, দাদা ? রসকলিটি দেখে, ঘুরে পড় নি ত? স্ব। আমি সে পোড়ারমুখ দেখি নাই, দেখিলে দুই চাবুকে বৈষ্ণবীর বৈষ্ণবী যাত্রা ঘুচিয়ে দিতাম। পরে দেবেন্দ্রের হস্ত হইতে মদ্যপাত্র কাড়িয়া লইয়া সুরেন্দ্র বলিতে লাগিলেন, “এখন একটু বন্ধ করিয়া, জ্ঞান থাকিতে থাকিতে ছুটে কথা শুন । তায় পর গিলো।” দে। বল, দাদা । আজ যে বড় চটাচটা দেখি—হৈমবতীর বাতাস গায়ে লেগেছে নাকি ? 尊 স্বরেন্দ্র ছন্মুখের কথায় কৰ্ণপাত না করিয়া বলিলেন, “বৈষ্ণবী সেজেছিলে কার সৰ্ব্বনাশ করবার জন্ত ?” দে। তা কি জান না ? মনে নাই, তারা মাষ্টারের বিয়ে হয়েছিল এক দেবকঙ্কার সঙ্গে ? সেই দেবকস্তা এখন বিধবা হয়ে ও গায়ের দত্তবাড়ী রোধে খায়। তাই "কে দেখতে গিয়াছিলাম । স্থ । কেন, এত বৃত্তিতেও তৃপ্তি জম্মিল না যে, সে অনাথ বালিকাকে অধঃপাতে দিতে হবে । দেখ দেবেন্দ্র, তুমি এত বড় পাপিষ্ঠ, এত বড় নৃশংস, এমন অত্যাচারী যে, বোধ হয়, আর আমরা তোমার সহবাস করিতে পারি না । সুরেন্দ্র এরূপ দার্ট্য সহকারে এই কথা বলিলেন যে, দেবেন্দ্র নিস্তব্ধ হইলেন। পরে দেবেন্দ্র গাম্ভীৰ্য্যসহকারে কহিলেন, “তুমি আমার উপর রাগ করিও না। আমার চিত্ত আমার বশ নহে। আমি সকল ত্যাগ করিতে পারি, এই স্ত্রীলোকের আশা ত্যাগ কুরিডে পারি না। যে দিন প্রথম তাহাকে তারাচরণের গৃহে দেখিয়াছি, সেই দিন অবধি আমি তাহার সৌন্দর্ঘ্যে অভিভূত হইয়া আছি। আমার চক্ষে এত সৌন্দৰ্য্য আর কোথাও নাই।
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।