সপ্তদশ পরিচ্ছেদ : যোগ্যং যোগ্যেন যোজয়েৎ &é জরে যেমন তৃষ্ণ রোগীকে দগ্ধ করে, সেই অবধি উহার জন্য লালসা আমাকে সেইরূপ দন্ধ করিতেছে। সেই অবধি আমি উহাকে দেখিবার জন্য কত কৌশল করিতেছি, তাছা বলিতে পারি না। এ পর্য্যস্ত পারি নাই—শেষে এই বৈষ্ণবী-সজ্জা ধরিয়াছি। তোমার কোন আশঙ্কা নাই—সে স্ত্রীলোক অত্যন্ত সাধৰী!” স্ব। তবে যাও কেন ? দে। কেবল তাহাকে দেখিবার জন্য। তাহাকে দেখিয়া, তাহার সঙ্গে কথা কহিয়া, তাহাকে গান শুনাইয়া আমার যে কি পৰ্য্যন্ত তৃপ্তি হয়, তাহা বলিতে পারি না। সু। তোমাকে আমি সত্য বলিতেছি—উপহাস করিতেছি না। তুমি যদি এই ছুষ্প্রবৃত্তি ত্যাগ না করিবে—তুমি যদি সে পথে আর যাইবে—তবে আমার সঙ্গে তোমার আলাপ এই পৰ্য্যন্ত বন্ধ। আমিও তোমার শক্ৰ হইব । দে। তুমি আমার একমাত্র মুহৃদ। আমি অর্ধেক বিষয় ছাড়িতে পারি, তবু তোমাকে ছাড়িতে পারি না। কিন্তু তোমাকে যদি ছাড়িতে হয়, সেও স্বীকার, তবু আমি কুন্দনন্দিনীকে দেখিবার আশা ছাড়িতে পারিব না। সু। তবে তাহাই হউক। তোমার সঙ্গে আমার এই পৰ্য্যন্ত সাক্ষাৎ । এই বলিয়া স্বরেন্দ্র দুঃখিত চিত্তে উঠিয়া গেলেন। দেবেন্দ্র একমাত্র বন্ধুবিচ্ছেদে অত্যন্ত ক্ষুণ্ণ হইয়া কিয়ংকাল বিমৰ্ষভাবে বসিয়া রহিলেন। শেষ, ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিলেন, “দূর হউক! এ সংসারে কে কার! আমিই আমার ” এই বলিয়া পাত্র পূর্ণ করিয়া ব্রাণ্ডি পান করিলেন। তাহার বশে আশু চিত্তপ্রফুল্লতা জন্মিল। তখন দেবেন্দ্র, শুইয়া পড়িয়া, চক্ষু মুদিয়া গান ধরিলেন, . “আমার নাম হীরা মালিনী। আমি থাকি রাধার কুঞ্জে, কুজা আমার ননদিনী। রাবণ বলে চন্দ্রাবলি, তুমি আমার কমল কলি, শুনে কীচক মেরে কৃষ্ণ, উদ্ধারিল যজ্ঞিসেনী ।” তখন পারিষদের সকলে উঠিয়া গিয়াছিল, দেবেন্দ্র নৌকাশূন্ত নদীবক্ষস্থিত ভেলার স্বায় এক বসিয়া রসের তরঙ্গে হাবুডুবু খাইতেছিলেন। রোগরূপ তিমি মকরাদি এখন জলের ভিতর লুকাইয়াছিল—এখন কেবল মন পবন আর চাদের আলো! এমন সময়ে
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।