একবিংশ পরিচ্ছেদ : হীরার কলহ-বিষবৃক্ষের মুকুল ‘īy নহে-যেমন সকলে মরিতে চাহে, তেমন মরা মহে ; আমি যথার্থ জাঙ্করিক অঙ্কপটে মরিতে চাহিয়াছিলাম। আমার অপরাধ লইও না।” . . নগেন্দ্র অনেকক্ষণ স্থিরভাবে থাকিয়া, শেষ দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন, “সূর্য্যমুখি । অপরাধ সকলই আমার । তোমার অপরাধ কিছুই নাই। আমি যথার্থ তোমার নিকট বিশ্বাসহন্ত। যথার্থই আমি তোমাকে ভুলিয়৷ কুন্দনন্দিনীতে—কি বলিব ? আমি যে যন্ত্রণ পাইয়াছি, যে যন্ত্রণ পাইতেছি, তাহা তোমাকে কি বলিব ? তুমি মনে করিয়াছ, আমি চিত্ত দমনের চেষ্টা করি নাই ; এমত ভাবিও না। আমি যত আমাকে তিরস্কার করিয়াছি, তুমি কখনও তত তিরস্কার করিবে না। আমি পাপাত্মা—আমার চিত্ত বশ হইল না।” সূৰ্য্যমুখী আর সহ করিতে পারিলেন না, যোড়হাত করিয়া কাতরস্বরে বলিলেন, “যাহা তোমার মনে থাকে, থাকৃ—আমার কাছে আর বলিও না। তোমার প্রতি কথায় আমার বুকে শেল বিধিতেছে।--আমার অদৃষ্টি যাহা ছিল, তাহা ঘটিয়াছে—আর শুনিতে চাহি না। এ সকল আমার অশ্রাব্য ।” “না। তা নয়, সূৰ্য্যমুখি। আরও শুনিতে হইবে। যদি কথা পাড়িলে, তবে মনের কথা ব্যক্ত করিয়া বলি—কেন না, অনেক দিন হইতে বলি বলি করিতেছি । আমি এ সংসার ত্যাগ করিব । মরিব ন!—কিন্তু দেশান্তরে যাইব । যাড়ী ঘর সংসারে আর মুখ নাই। তোমাতে আমার আর মুখ নাই। আমি তোমার অযোগ্য স্বামী। আমি আর কাছে থাকিয় তোমাকে ক্লেশ দিব না। কুন্দনন্দিনীকে সন্ধান করিয়া আমি দেশদেশান্তরে ফিরিব। তুমি এ গৃহে গৃহিণী থাক। মনে মনে ভাবিও তুমি বিধবা—যাহার স্বামী এরূপ পামর, সে বিধবা নয় ত কি ? কিন্তু আমি পামর হই আর যাই হই, তোমাকে প্রবঞ্চনা করিব না। আমি অন্যাগতপ্রাণ হইয়াছি—সে কথা তোমাকে স্পষ্ট বলিব ; এখন আমি দেশত্যাগ করিয়া চলিলাম। যদি কুন্দনন্দিনীকে ভুলিতে পারি, তবে আবার আসিব । নচেৎ তোমার সঙ্গে এই সাক্ষাৎ ” এই শেলসম কথা শুনিয়া স্বৰ্যমুখ কি বলিবেন? কয়েক মুহূৰ্ত্ত প্রস্তরময়ী মূৰ্ত্তিবং পৃথিবীপানে চাহিয়া রহিলেন। পরে সেই ভূতলে অধোমুখে শুইয়া পড়িলেন। মাটিতে মুখ লুকাইয়৷ সূৰ্য্যমুখী-কাদিলেন কি ? হত্যাকারী ব্যাক্স যেরূপ হতজীবের যন্ত্রণা দেখে, নগেন্দ্র, সেইরূপ স্থিরভাবে দাড়াইয়া দেখিতেছিলেন । মনে মনে বলিতেছিলেন, “সেই ত মরিতে হইবে—তার আঞ্জ কাল কি ? জগদীশ্বরের ইচ্ছ,—আমি কি করিব ? আমি কি
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।