পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ : চোরের উপর বাটপাড়ি ૧૭ শিকল এবং তাঁহাতে তালা চাবি আঁট থাকিত, কিন্তু এক দিন অকস্মাং মালতী আসিয়া দেখিল, তালা চাবি দেওয়া নাই। মালতী হঠাৎ শিকল খুলিয়া চুয়ার ঠেলিয়া দেখিল। দেখিল ঘর ভিতর হইতে বন্ধ। তখন সে বুলি, ইহার ভিতর মানুষ থাকে। মালতী হীরাকে কিছু বলিল না, কিন্তু মনে মনে ভাবিতে লাগিল—মানুষটা কে ? প্রথমে ভাবিল, পুরুষ মানুষ। কিন্তু কে কার কে, মালতী সকলই ত জানিত—এ কথা সে বড় মনে স্থান দিল না। শেষে তাহার মনে মনে সন্দেহ হইল—কুন্দই বা এখানে আছে। কুন্দের নিরুদ্দেশ হওয়ার কথা মালতী সকলই শুনিয়াছিল। এখন সন্দেহভঞ্জনার্থ শীঘ্র সম্পায় করিল। হীরা বাবুদিগের বাড়ী হইতে একটি হরিণশিশু আনিয়াছিল। সেটি বড় চঞ্চল বলিয়া বাধাই থাকিত। এক দিন মালতী তাহাকে আহার করাইতেছিল। আহার করাইতে করাইতে হীরার অলক্ষ্যে তাহার বন্ধন খুলিয়া দিল। হরিণশিশু মুক্ত হইবামাত্র বেগে বাহিরে পলায়ন করিল। দেখিল, হীরা ধরিবার জন্য তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গেল । ঈরা যখন চুটিয়া যায়, মালতী তখন ব্যগ্রম্বরে ডাকিতে লাগিল, “হীরে। ও হীরে! ও গঙ্গাজল “ হাঁরা দূরে গেলে মালতী আছাড়িয়া কাদিয়া উঠিল, “ও মা। আমার গঙ্গাজল এমন হলো কেন?” এই বলিয়া কাদিতে কঁাদিতে কুন্দের দ্বারে ঘা মারিয়া কাতর স্বরে বলিতে লাগিল, “কুন্দ ঠাকুরুণ। কুন্দ! শীঘ্র বাহির হও। গঙ্গাজল কেমন হয়েছে।” সুতরাং কুন্দ ব্যস্ত হইয়া দ্বার খুলিল। মালতী তাহাকে দেখিয়া হি হি করিয়া হাসিয়া পলাইল । কুন্দ দ্বার রুদ্ধ করিল। পাছে হীরা তিরস্কার করে বলিয়া হীরাকে কিছু বলিল না। মালতী গিয়া দেবেন্দ্রকে সন্ধান বলিল। দেবেন্দ্র স্থির করিলেন, স্বয়ং হীরার বাড়ী গিয়া এস্পার কি ওস্পার, যা হয় একটা করিয়া আদিবেন। কিন্তু সে দিন একটা “পার্টি” ছিল—সুতরাং জুটিতে পারিলেন না। পর দিন যাইবেন।