বিষবৃক্ষ "לף হীরা উত্তর করিল না। দেবেন্দ্র বসিলেন । তখন হীরা তক্তপোষের উপর অতি পরিষ্কার শয্যা রচনা করিয়া দেবেজকে বসাইল । এবং সিন্দুক হইতে একটি ক্ষুদ্র রূপার্বাধী হুক বাহির করিল। স্বহস্তে তাহাতে শীতল জল পুরিয়া মিঠাকড়া তামাকু সাজিয়া, পাতার নল করিয়া দিল । দেবেন্দ্র পকেট হইতে একটি ব্রাণ্ডি ক্লাস্ক বাহির করিয়া, বিনা জলে পান করিলেন এবং রাগযুক্ত হইলে দেখিলেন, হীরার চক্ষু বড় সুন্দর। বস্তুতঃ সে চক্ষু মুন্দর। চক্ষু বৃহৎ নিবিড় কৃষ্ণতার, প্রদীপ্ত এবং বিলোলকটাক্ষ । দেবেন্দ্র হীরাকে বলিলেন, “তোমার দিব্য চক্ষু।” হাঁর মৃত্যু হাসিল। দেবেন্দ্র দেখিলেন, এক কোণে একখানা ভাঙ্গ বেহালা পড়িয়া আছে। দেবেন্দ্র গুন গুন করিয়া গান করিতে করিতে সেই বেহালা আনিয়া তাহাতে ছড়ি দিলেন। বেহালা ঘঁকির ঘেঁকির করিতে লাগিল । দেবেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ বেহালা কোথায় পাইলে ?” হীরা কহিল, "এক জন ভিখারীর কাছে কিনিয়াছিলাম।” দেবেন্দ্র বেহালা হন্তে লইয়া একপ্রকার চলনসই করিয়া লইলেন এবং তাহার সহিত কণ্ঠ মিলাইয়া, মধুর স্বরে মধুর ভাবযুক্ত মধুর পদ মধুরভাবে গায়িলেন। ঈরার চক্ষু আরও জলিতে লাগিল। ক্ষণকালজন্ত হীরার সম্পূর্ণ আত্মবিস্মৃতি জন্মিল। সে যে হীরা, এই যে দেবেন্দ্র, তাহ ভুলিয়া গেল। মনে করিতেছিল, ইনি স্বামী—অামি পত্নী। মনে করিতেছিল, বিধাতা দুই জনকে পরস্পরের জন্য সৃজন করিয়া, বহুকাল হইতে মিলিত করিয়াছেন, বহুকাল হইতে যেন উভয়ের প্রণয়সুখে উভয়ে সুখী। এই মোহে অভিভূত হীরার মনের কথা মুখে ব্যক্ত হইল। দেবেন্দ্র হীরার মুখে অৰ্দ্ধব্যক্তস্বরে শুনিলেন যে, হীরা দেবেন্দ্রকে মনে মনে প্রাণ সমর্পণ করিয়াছে। - কথা ব্যক্ত হইবার পর হীরার চৈতন্য হইল, মস্তক ঘুরিয়া উঠিল। তখন সে উন্মত্তের স্তায় আকুল হইয়া দেবেন্দ্রকে কহিল, “আপনি শীঘ্র আমার ঘর হইতে যান।” দেবেন্দ্র বিস্মিত হইয়া কহিলেন, “সে কি, হীরা ?” হীরা। আপনি শীঘ্ৰ যান—নহিলে আমি চলিলাম। দে। সে কি, তাড়াইয়া দিতেছ কেন ? হী । আপনি যান—নহিলে আমি লোক ডাকিব-—আপনি কেন আমার সর্বনাশ করিতে আসিয়াছিলেন । হীরা তখন উন্মাদিনীয় স্থায় বিবশ ।
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।