পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

v8 বিষবৃক্ষ “তুমি এ সকল আপত্তি করিবে না। তুমি বলিবে, হুই বিবাহ নীতি-বিরুদ্ধ কাজ । ভাই, কিসে জানিলে ইহা নীতি-বিরুদ্ধ কাজ ? তুমি এ কথা ইংরেজের কাছে শিখিয়াছ, নচেং ভারতবর্ষে এ কথা ছিল না। কিন্তু ইংরেজেরা কি অভ্রান্ত ? যিহুদার বিধি আছে বলিয়া ইংরেজদিগের এ সংস্কার—কিন্তু তুমি আমি যিহুদী বিধি ঈশ্বরবাক্য বলিয়া মানি না। তবে কি হেতুতে এক পুরুষের তুই বিবাহ নীতি-বিরুদ্ধ বলিব ? “তুমি বলিবে, যদি এক পুরুষের তুই স্ত্রী হইতে পারে, তবে এক স্ত্রীর দুই স্বামী না হয় কেন ? উত্তর—এক স্ত্রীর দুই স্বামী হইলে অনেক অনিষ্ট ঘটিবার সম্ভাবনা ; এক পুরুষের তুই বিবাহে তাহার সম্ভাবনা নাই। এক স্ত্রীর দুই স্বামী হইলে সস্তানের পিতৃনিরূপণ হয় না—পিতাই সস্তানের পালনকৰ্ত্ত—তাহার অনিশ্চয়ে সামাজিক উচ্ছঙ্খলতা জন্মিতে পারে। কিন্তু পুরুষের দুই বিবাহে সন্তানের মাতার অনিশ্চয়তা জন্মে না। ইত্যাদি আরও অনেক কথা বলা যাইতে পারে । “যাহা অধিকাংশ লোকের অনিষ্টকারক, তাহাই নীতি-বিরুদ্ধ। তুমি যদি পুরুষের দুই বিবাহ নীতিবিরুদ্ধ বিবেচনা কর, তবে দেখাও যে, ইহা অধিকাংশ লোকের অনিষ্টকর। “গৃহে কলহাদির কথা বলিয়া তুমি আমাকে যুক্তি দিবে। আমি একটা যুক্তির কথা বলিব। আমি নিঃসন্তান। আমি মরিয়া গেলে, আমার পিতৃকুলের নাম লুপ্ত হইবে। আমি এ বিবাহ করিলে সন্তান হইবার সম্ভাবনা—ইহা কি অযুক্তি ? “শেষ আপত্তি—সূৰ্য্যমুখী। স্নেহময়ী পত্নীর সপত্নীকণ্টক করি কেন ? উত্তরসূৰ্য্যমুখী এ বিবাহে চুঃখিত নহেন। তিনিই বিবাহের প্রসঙ্গ উত্থাপন করিয়াছেন—তিনিই ইহাতে আমাকে প্রবৃত্ত করিয়াছেন—তিনিই ইহাতে উদ্যোগী। তবে আর কাহার স্থপত্তি ? “তবে কোন কারণে আমার এই বিবাহ নিন্দনীয় ?” ষড়বিংশ পরিচ্ছেদ কাহার আপত্তি কমলমণি পত্র পড়িয়া বলিলেন, “কোন কারণে নিন্দনীয় ? জগদীশ্বর জানেন। কিন্তু কি ভ্ৰম । পুরুষে বুঝি কিছুই বুঝে না। যা হৌক, মন্ত্রিবর আপনি সজা করুন। আমাদিগের গোবিন্দপুরে যাইতে হইবে।” ঐশ। তুমি কি বিবাহ বন্ধ করিতে পারিবে ?