পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ ঃ আশীৰ্ব্বাদ-পত্ৰ brవె সঙ্কল্প করিলাম, যদি কুন্দনন্দিনীকে আবার কখনও পাই, তবে তাহার হাতে স্বামীকে সমর্পণ করিয়া উহাকে মুখী করিব। কুন্দনন্দিনীকে স্বামী দান করিয়া আপনি গৃহত্যাগ করিয়া যাইব ; কেন না, আমার স্বামী কুন্দনন্দিনীর হইলেন, ইহা চক্ষে দেখিতে পারিব না। এখন কুন্দনন্দিনীকে পুনৰ্ব্বার পাইয়া তাহাকে স্বামী দান করিলাম। আপনিও গৃহত্যাগ করিয়া চলিলাম । “কালি বিবাহ হইবার পরেই আমি রাত্রে গৃহত্যাগ করিয়া যাইতাম। কিন্তু স্বামীর যে মুখের কামনায় আপনার প্রাণ আপনি বধ করিলাম, সে মুখ দুই এক দিন চক্ষে দেখিয়া যাইবার সাধ ছিল। আর তোমাকে আর একবার দেখিয়। যাইব সাধ ছিল। তোমাকে আসিতে লিখিয়াছিলাম—তুমি অবশ্য আসিবে, জানিতাম। এখন উভয় সাধ পরিপূর্ণ হইয়াছে। আমার যিনি প্রাণাধিক, তিনি মুখী হইয়াছেন ইহা দেখিয়াছি। তোমার নিকট বিদায় লইয়াছি। আমি এখন চলিলাম। - “তুমি যখন এই পত্র পাইবে, তখন আমি অনেক দূর যাইব । তোমাকে যে বলিয়া আসিলাম না, তাহার কারণ এই যে, তা হইলে তুমি আসিতে দিতে না। এখন তোমাদের . কাছে আমার এই ভিক্ষা যে, তোমরা আমার সন্ধান করিও না । “আর যে তোমার সহিত সাক্ষাৎ হইবে, এমত ভরসা নাই। কুন্দনন্দিনী থাকিতে আমি আর এ দেশে আসিব না—এবং আমার সন্ধানও পাইবে না। আমি এখন পথের কাঙ্গালিনী হইলাম—ভিখারিণীবেশে দেশে দেশে ফিরিব—ভিক্ষা করিয়া দিনপাত করিব— আমাকে কে চিনিবে ? আমি টাকা কড়ি সঙ্গে লইলে লইতে পারিতাম, কিন্তু প্রবৃত্তি হইল না। আমার স্বামী আমি ত্যাগ করিয়া চলিলাম—সোনা রূপা সঙ্গে লইয়। যাইব ? “তুমি আমার একটি কাজ করিও। আমার স্বামীর চরণে আমার কোটি কোটি প্রণাম জানাইও। আমি তাহাকে পত্র লিখিয়া যাইবার জন্য অনেক চেষ্টা করিলাম, কিন্তু পারিলাম না। চক্ষের জলে অক্ষর দেখিতে পাইলাম না—কাগজ ভিজিয়া নষ্ট হইল। কাগজ ছিড়িয়া ফেলিয়া আবার লিখিলাম—আবার ছিড়িলাম—আবার ছিড়িলাম—কিন্তু আমার বলিবার যে কথা আছে, তাহা কোন প্রত্রেই বলিতে পারিলাম না। কথা বলিতে পারিলাম না বলিয়া, তাহাকে পত্র লেখা হইল না। তুমি যেমন করিয়া ভাল বিবেচনা কর, তেমনি করিয়া আমার এ সংবাদ তাহাকে দিও। তাহাকে বুঝাইয়া বলিও যে, তাহার উপর রাগ করিয়া আমি দেশাস্তরে চলিলাম না। র্তাহার উপর আমার রাগ নাই ; কখনও তাহার উপর রাগ করি নাই, কখনও করিব না। র্যাহাকে মনে হইলেই আহলাদ হয়, তাহার 〉。