উনত্রিংশ পরিচ্ছেদ : বিষবৃক্ষ কি ? సి) আবশ্বক। ইহার মধ্যে শক্তি প্রকৃতিজন্তা ; প্রবৃত্তি শিক্ষাজন্য। প্রকৃতিও শিক্ষার উপর নির্ভর করে। সুতরাং চিত্তসংযমপক্ষে শিক্ষাই মূল। কিন্তু গুরুপদেশকে কেবল শিক্ষা বলিতেছি না, অন্তঃকরণের পক্ষে দুঃখভোগই প্রধান শিক্ষা। নগেন্দ্রের এ শিক্ষা কখনও হয় নাই। জগদীশ্বর তাহাকে সকল মুখের অধিপতি করিয়া পৃথিবীতে পাঠাইয়াছিলেন। কান্ত রূপ; অতুল ঐশ্বৰ্য্য; নীরোগ শরীর; সৰ্ব্বব্যাপিনী বিদ্যা, সুশীল চরিত্র, স্নেহময়ী সাধ্বী স্ত্রী ; এ সকল এক জনের ভাগ্যে প্রায় ঘটে না। নগেন্দ্রের এ সকলই ঘটিয়াছিল। প্রধানপক্ষে, নগেন্দ্র নিজ চরিত্রগুণেই চিরকাল সুখী ; তিনি সত্যবাদী, অথচ প্রিয়ংবদ ; পরোপকার, অথচ ন্যায়নিষ্ঠ ; দাতা, অথচ মিতব্যয়ী ; স্নেহশীল, অথচ কৰ্ত্তব্যকৰ্ম্মে স্থিরসঙ্কল্প। পিতা, মাতা বর্তমান থাকিতে র্তাহাদিগের নিতান্ত ভক্ত এবং প্রিয়কারী ছিলেন ; ভাৰ্য্যার প্রতি নিতান্ত অনুরক্ত ছিলেন ; বন্ধুর হিতকারী ; ভূত্যের প্রতি কৃপাবা অমুগতের প্রতিপালক ; শত্রুর প্রতি বিবাদশূন্ত। তিনি পরামর্শে বিজ্ঞ ; কার্য্যে সরল ; আলাপে নয় ; রহস্তে বাত্ময়। এরূপ চরিত্রের পুরস্কারই অবিচ্ছিন্ন মুখ ;–নগেন্দ্রের আশৈশব তাহাই ঘটিয়াছিল। তাহার দেশে সম্মান, বিদেশে যশ: ; অনুগত ভূত্য ; প্রজাগণের সন্নিধানে ভক্তি ; সূৰ্য্যমুখীর নিকট অবিচলিত, অপরিমিত, অকলুষিত মেহরাশি। যদি তাহার কপালে এত মুখ না ঘটিত, তবে তিনি কখনও এত দুঃখী হইতেন না। দুঃখী না হইলে লোভে পড়িতে হয় না। যাহার যাহাতে অভাব, তাহার তাঁহাতেই লোভ। কুন্দনন্দিনীকে লুব্ধলোচনে দেখিবার পূৰ্ব্বে নগেন্দ্র কখনও লোভে পড়েন নাই ; কেন না, কখনও কিছুরই অভাব জানিতে পারেন নাই। সুতরাং লোভ সম্বরণ করিবার জন্য যে মানসিক অভ্যাস বা শিক্ষা আবশ্বক, তাহ তাহার হয় নাই। এই জন্যই তিনি চিত্তসংযমে প্রবৃত্ত হইয়াও সক্ষম হইলেন না। অবিচ্ছিন্ন মুখ, দুঃখের মূল ; পূৰ্ব্বগামী হুঃখ ব্যতীত স্থায়ী সুখ জন্মে না। নগেন্দ্রের যে দোষ নাই, এমত বলি না। র্তাহার দোষ গুরুতর ; প্রায়শ্চিন্তুe গুরুতর আরম্ভ হইল।
পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।