পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਆਿ পরিচ্ছেদ অন্বেষণ বলা বাহুল্য যে, যখন সূৰ্য্যমুখীর পলায়নের সংবাদ গৃহমধ্যে রাষ্ট হইল, তখন র্তাহার অন্বেষণে লোক পাঠাইবার বড় তাড়াতাড়ি পড়িয়া গেল। নগেন্দ্র চারি দিকে লোক পাঠাইলেন, শ্ৰীশচন্দ্র লোক পাঠাইলেন, কমলমণি চারি দিকে লোক পাঠাইলেন। বড় বড় দাসীরা জলের কলসী ফেলিয়া ছুটিল ; হিন্দুস্তানী দ্বারবানের বঁাশের লাঠি হাতে করিয়া, ভূলভরা ফরাশীর ছিটের মেরজাই গায়ে দিয়া, মসমস্ করিয়া নাগরা জুতার শব্দ করিয়া চলিল—খানসামার গামছা কাদে, গোট কাকালে, মাঠাকুরাগীকে ফিরাতে চলিল। কতকগুলি আত্মীয় লোক গাড়ি লইয়া বড় রাস্তায় গেল। গ্রামস্থ লোক মাঠে ঘাটে খুজিয়া দেখিতে লাগিল ; কোথাও বা গাছতলায় কমিটি করিয়া তামাকু পোড়াইতে লাগিল। ভদ্রলোকেরাও বারোইয়ারির আটচালায়, শিবের মন্দিরের রকে, হায়কচ কচি ঠাকুরের টোলে এবং অন্যান্য তথাবিধ স্থানে বসিয়া ঘোট করিতে লাগিলেন। মাগী ছাগী স্নানের ঘাটগুলাকে ছোট আদালত করিয়া তুলিল। . বালকমহলে ঘোর পর্বাহ বাধিয়া গেল ; অনেক ছেলে ভরসা করিতে লাগিল, পাঠশালার ছুটি হইবে। প্রথমে শ্রীশচন্দ্র, নগেন্দ্র এবং কমলকে ভরসা দিতে লাগিলেন, “তিনি কখনও পথ ইটেন নাই—কত দূর যাইবেন ? এক পোওয়া আধ ক্রোশ পথ গিয়া কোথায় বসিয়া আছেন, এখনই সন্ধান পাইব।” কিন্তু যখন দুই তিন ঘণ্টা অতীত হইল, অথচ সূর্যমুখীর কোন সংবাদ পাওয়া গেল না, তখন নগেন্দ্র স্বয়ং তাহার সন্ধানে বাহির হইলেন। কিছুক্ষণ রৌদ্রে পুড়িয়া মনে করিলেন, “আমি খুজিয়া বেড়াইতেছি, কিন্তু হয়ত সূৰ্য্যমুখীকে এতক্ষণ বাড়ী আনিয়াছে।” এই বলিয়া ফিরিলেন। বাড়ী আসিয়া দেখিলেন, সূৰ্য্যমুখীর কোন সংবাদ নাই। আবার বাহির হইলেন। আবার ফিরিয়া বাড়ী আসিলেন। এইরূপ দিনমান গেল । বস্তুতঃ শ্ৰীশচন্দ্ৰ যাহা বলিয়াছিলেন, তাহা সত্য। সূৰ্য্যমুখী কখনও পদব্রজে বাটার বাহির হয়েন নাই। কতদূর যাইবেন ? বাটা হইতে অৰ্দ্ধ ক্রোশ দূরে একটা পুষ্করিণীর ধারে আম্রবাগানে শয়ন করিয়াছিলেন। একজন খানসাম, যে অস্তঃপুরে যাতায়াত করিত, সেই সন্ধান করিতে করিতে সেইখানে আসিয়া তাহাকে দেখিল। চিনিয়া বলিল, “আঞ্জে, আমুন -