পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮১
মহরম পর্ব্ব—চতুর্দ্দশ প্রবাহ

পুরষই হউন, কি মহাপ্রাজ্ঞ সুপণ্ডিতই হউন, স্ত্রীজাতির মায়াজাল ভেদ করা বড় কঠিন। নারীবুদ্ধির অন্ত পাওয়া সহজ নহে। জাএদা এক পাত্রে মধু ও অন্য পাত্রে জল আনিয়া স্বামীর সম্মুখে রাখিলেন।

 সকৌতুকে হাসান জিজ্ঞাসা করিলেন, “অসময়ে মধু?”

 মায়াপূর্ণ আঁখিতে হাসানের দিকে একবার তাকাইয়া জাএদা উত্তর করিলেন, “আপনার জন্য আজ আট দিন এই মধু সঞ্চয় করিয়া রাখিয়াছি, পান করিয়া দেখুন, খুব ভাল মধু।”

 মধুর পেয়ালা হস্তে তুলিয়া হাসান বলিতে লাগিলেন, “আমার জন্য আট দিন যত্ন করিয়া রাখিয়াছ? ধন্য তোমার যত্ন ও মায়া! আমি এখনই খাইতেছি।” হাসান সহর্ষে এই কথা বলিয়া মধুর পাত্র হস্তে তুলিয়া মধু পান করিলেন। মুহূর্ত্তমধ্যেই বিষের কার্য্য আরম্ভ হইল। শরীরের অবস্থার পরিবর্ত্তন ও চিত্তের অস্থিরতাপ্রযুক্ত পিপাসার আধিক্য হইল। ক্রমে কণ্ঠ, তালু ও জিহ্বা শুষ্ক হইয়া আসিল, চক্ষু লোহিতবর্ণ হইয়া শেষে দৃষ্টির ব্যাঘাত জন্মাইতে লাগিল। তিনি যেন চতুর্দ্দিক অন্ধকার দেখিতে লাগিলেন। জাএদাকে বলিলেন, “জাএদা! এ কি হইল? এ কেমন মধু? এত জল পান করিলাম, পিপাসার শান্তি হইল না। ক্রমেই শরীর অবশ হইতেছে, পেটের মধ্যে কে যেন আগুন জ্বালিয়া দিয়াছে। ইহার কারণ কি? কিসে এমন হইল?”

 জাএদা বায়ুবাজনে প্রবৃত্ত হইলেন। মস্তকে শীতল জল ঢালিতে লাগিলেন। কিছুতেই হাসান সুস্থির হইলেন না। ক্রমেই শরীরের জ্বালা বৃদ্ধি হইতে লাগিল। তিনি বিষের যন্ত্রণায় অস্থির হইয়া শয্যার উপর গড়গড়ি দিতে লাগিলেন। পেটের বেদনার ক্রমশঃই বৃদ্ধি! হাসান অত্যন্ত কাতর হইয়া অবশেষে কাতরস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “জাএদা, এ কিসের মধু? মধুতে এমন আগুন? মধুর এমন জ্বালা? উঃ! আর সহ্য় হয় না! আমার প্রাণ গেল। জাএদা! উঃ। আর আমি সহ্য করিতে পারি না।”

 জাএদা যেন অবাক! মুখে কথা নাই। অনেকক্ষণ পরে কেবলমাত্র