পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৩
মহরম পর্ব্ব—চতুর্দ্দশ প্রবাহ

কিছুতেই থাকে না। বিশেষতঃ স্ত্রীজাতি শত্রুতাসাধনে উত্তেজিত হইয়া উঠিলে, প্রাণ থাকিতে তাহা শেষ না করিয়া ক্ষান্ত হয় না। জাএদা ক্ষান্ত হইবেন কেন? জাএদার পশ্চাতে লোক আছে। জাএদা একটু নিরুৎসাহ হইলে, মায়মুনা তাহাকে নানা প্রকারে উৎসাহিত করিয়া নূতন-ভাবে উত্তেজিত করিত। একবার বিফল হইলে দ্বিতীয়বারে অবশ্যই সুফল ফলিবে, এ কথাও জাএদার কর্ণে মধ্যে মধ্যে ফুৎকারের ন্যায় বাজিত।

 এদিকে মায়মুনা ভাবিতেছিল:—যাহা দিয়াছি, তাহাতে আর রক্ষা নাই। একবার গলাধঃকরণ হইলেই কার্য্যসিদ্ধি হইবে। হাসান জাএদার গৃহে আসিয়া বসিয়াছেন, মধুপানে আত্মবিকার উপস্থিত হইয়াছে, গোপনে ইহা সন্ধান লইয়া সে একেবারে নিশ্চিন্তভাবে বসিয়া আছে, কোন্ সময়ে হাসানের পুরী হইতে ক্রন্দনধ্বনি শুনিবে, নিজেও কাঁদিতে কাঁদিতে যাইয়া পুরবাসিগণের সহিত হাসানের বিয়োগজনিত ক্রন্দনে যোগ দিবে—এইরূপ আলোচনায় সারা নিশি বসিয়া বসিয়াই কাটাইল। প্রভাত হইয়া আসিল, তবুও ক্রন্দনশব্দ তাহার কর্ণে প্রবেশ করিল না। দুই এক পা করিয়া সে জাএদার গৃহ পর্য্যন্ত আসিল, জাএদার মুখে সমুদয় ঘটনা শুনিয়া আশ্চর্য্যাম্বিত হইল; জিজ্ঞাসা করিল, “তবে উপায় কি?”

 জাএদা উত্তর করিল, “উপায় অনেক আছে। তুমি বাজার হইতে আমাকে কিছু মিষ্ট খেজুর আনিয়া দাও। এবারে দেখিও, কিছুতেই রক্ষা পাইবে না *

 “খেজুরে কি হইবে?”

 “মধুতে যাহা হইয়াছিল, তাহাই হইবে?”

 “তিনি কি তোমার ঘরে আর আসিবেন?”

 “কেন আসিবেন না?”

 “যদি জানিয়া থাকেন—ঘুণাক্ষরেও যদি টের পাইয়া থাকেন, তবে তোমার ঘরে আসা দূরে থাক, তিনি তোমার মুখও দেখিবেন না।”

 “বোন্! তুমি আমার বয়সে বড়, অনেক দেখিয়াছ, অনেক শুনিয়াও