স্ত্রী-পরিজনের মুখ আর দেখিব না; এই পুরীতে আমার জীবন-বিনাশের প্রধান ষড়যন্ত্র চলিতেছে। কিছুতেই এখানে থাকা আর উচিত নহে। বাহিরের শত্রু হইতে রক্ষা পাওয়া বরং সহজ, কিন্তু ঘরের শত্রু হইতে রক্ষা পাওয়া দুষ্কর! শত্রু দূরে থাকিলেও সর্ব্বদা আতঙ্ক! কোন্ সময়ে কি ঘটে, কোন্ সূত্রে, কোন্ সুযোগে, কি উপায়ে, কোন্ পথে, কাহার সাহায্যে, শত্রু আসিয়া কি কৌশলে শত্রুতা সাধন করে, এই ভাবনায় ও এই ভয়েই সর্ব্বদা আকুল থাকিতে হয়। কিন্তু আমার ঘরেই শত্রু! আমার প্রাণই আমার শত্রু! নিজ দেহই আমার ঘাতক! নিজ হস্তই আমার বিনাশক! নিজ আত্মাই আমার বিসর্জ্জক! উঃ, কি দারুণ কথা! মুখে আনিতেও কষ্টবোধ হয়। স্ত্রী ও স্বামীর দেহ ভিন্ন বটে, কিন্তু আমি ত আর-কিছুই ভিন্ন দেখি না। স্বামী ও স্ত্রী এক দেহ হইতে পারে না বলিয়াই ভিন্ন ভাবে থাকে; কিন্তু আত্মা এক, মন এক, মায়ামমতা এক, আশা এক, ভরসা এক, প্রাণ এক—সকলই এক। কিন্তু কি দুঃখ! কি ভয়ানক কথা! হা অদৃষ্ট! আমারও সেই এক-আত্মা এক-প্রাণ স্ত্রী—তাহার হস্তেই স্বামী-বিনাশের বিষ! কি পরিতাপ! সেই কোমল হস্ত স্বামীর জীবন-প্রদীপ নির্ব্বাণের জন্য প্রসারিত! আর এ স্থানে থাকিব না। বনে বনে পশুপক্ষীদিগের সহবাসে থাকাই ভাল। এ পুরীতে আর থাকিব না।”
এইরূপে দৃঢ়সঙ্কল্প হইয়া হাসান আপন প্রধান মন্ত্রী আব্বা ও কতিপয় বন্ধু সমভিব্যাহারে মদিনার নিকটস্থ মুসাল নগরে গমন করিলেন। মুসালবাসীরা হজরত এমাম হাসানের শুভাগমনে যার-পর-নাই আনন্দিত হইয়া অতি সমাদরে বিশেষ ভক্তিসহকারে তাঁহাকে অভ্যর্থনা করিলেন। কিন্তু এখনে তাঁহার ভাগ্যে বেশী দিন বিশ্রাম ঘটিল না।