পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৩
মহরম পর্ব্ব—পঞ্চদশ প্রবাহ

করিয়া অতি ত্রস্তে যাইয়া বৃদ্ধকে ধরিলেন। ঐ বর্শার দ্বারাই তিনি সেই বৃদ্ধের বক্ষে আঘাত করিতে উদ্যত হইলেন। এমন সময় এমাম হাসান অনুনয় বিনয় করিয়া বলিতে লাগিলেন, “ভাই, প্রিয় আব্বাস্! যাহা হইবার হইয়াছে, ক্ষমা কর। ভাই! বিচারের ভার নিজ হস্তে লইও না। সর্ব্ববিচারকের প্রতি বিশ্বাস করিয়া তাঁহাকে বিচারের ভার দিয়া বৃদ্ধকে ছাড়িয়া দাও, এই আমার প্রার্থনা।”

 হাসানের কথায় এব্‌নে আব্বাস্ বৃদ্ধকে ছাড়িয়া দিয়া হাসানকে বলিলেন, “আপনার আজ্ঞা শিরোধার্য্য; কিন্তু সর্ব্বদা স্মরণ রাখিবেন, আগন্তুকের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের এই ফল!”

 শোণিতের ধারা বহিতেছে। উপাসনা-মন্দির রক্তে রঞ্জিত হইয়া যেন লিখিয়া যাইতেছে,—‘আগন্তুককে কখনও বিশ্বাস করিও না। প্রকৃত ধার্ম্মিক জগতে প্রায়ই দেখিতে পাওয়া যায় না। বর্শার আঘাতে হাসান অত্যন্ত কাতর হইয়া পড়িলেন; তথাপি বলিতে লাগিলেন, “আব্বাস্ তোমার বুদ্ধিকে ধন্যবাদ। তোমার চক্ষুকেও সহস্র প্রশংসা দিই। মানুষের বাহ্যিক আকৃতি দর্শন করিয়া, অস্থিমাংস ভেদ করিয়া, মর্ম্ম পর্য্যন্তও দেখিবার শক্তি, ভাই, আমি ত আর কাহারও দেখি নাই! আমার অদৃষ্টে কি আছে জানি না, আমি কাহারও মন্দ করি নাই, তথাপি আমার শত্রুর শেষ নাই। পদে পদে, স্থানে স্থানে, নগরে নগরে আমার শত্রু আছে, ইহা আগে জানিতাম না। কি আশ্চর্য্য। সকলেই আমার প্রাণবধে অগ্রসর, সকলেই সেই অবসরের প্রত্যাশী। এখন কোথায় যাই? যে দিকে তাকাই, সেই দিকেই হন্তা, সেই দিকেই আমারই প্রাণনাশক শত্রু! যে প্রাণের দায়ে মদিনা পরিত্যাগ করিলাম, এখানেও সেই প্রাণ সঙ্কটাপন্ন। কিছুতেই শত্রুর হস্ত হইতে নিস্তার পাইলাম না। আমি ভাবিয়াছিলাম, জাএদাই আমার পরম শত্রু, এখন দেখি, জগৎময় আমার শত্রু!”

 হাসান ক্রমেই অস্থির হইতে লাগিলেন। অস্ত্রের আঘাত, তৎসহ বিষের যন্ত্রণা তাঁহাকে বড়ই কাতর করিয়া তুলিল। তিনি কাতর স্বরে এব্‌নে আব্বাস্‌কে বলিলেন, “যত শীঘ্র পার, আমাকে মাতামহের ‘রওজা শরীফে’