পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৯৪

লইয়া চল। যদি বাঁচি, তবে আর কখনও ‘রওজা মোবারক’ হইতে অন্য স্থানে যাইব না। ভ্রমেই লোকের সর্ব্বনাশ হয়, ভ্রমেই লোক মহাবিপদগ্রস্থ হয়, ভ্রমে পড়িয়াই লোক কষ্টভোগ করে, প্রাণ হারায়। ইচ্ছা করিয়া কেহই বিপদভার মাথায় তুলিয়া লয় না, দুঃখীও হইতে চাহে না। আমি মুসাল নগরে না আসিয়া যদি মাতামহের রওজা শরীফে থাকিতাম, তাহা হইলে কোন বিপদেই পতিত হইতাম না। কপট ধর্ম্ম-পিপাসুর কথায় ভুলিয়া বর্শাঘাতে আহতও হইতাম না। ভাই, যে উপায়েই হউক, শীগ্র আমাকে মদিনায় লইয়া চল। অতি অল্প সময়ের জন্যও আর মুসাল নগরে থাকিতে ইচ্ছা হইতেছে না। যদি এই আঘাতেই প্রাণ যায়, কি করিব, কোন উপায় নাই। কিন্তু মাতামহের পবিত্র সমাধিক্ষেত্রে প্রাণবিয়োগ হইবে, তাঁহার পদ প্রান্তেই পড়িয়া থাকিব, এই আমার শেষ ইচ্ছা। আর ভাই! সেই পবিত্র স্থানে প্রাণ বাহির হইলে, সেই সময়ের নিদারুণ মৃত্যুযন্ত্রণা হইতে রক্ষা পাইব। আজ্‌রাইলের (যমদূতের) কঠিন ব্যবহার হইতেও বাঁচিতে পারিব।”

 এই পর্য্যন্ত বলিয়া হাসান পুনর্ব্বার ক্ষীণস্বরে কহিতে লাগিলেন, “ভাই! অবশ্যই আমার আশা-ভরসা সকলই শেষ হইয়াছে। পদে পদে ভ্রম, পদে পদে বিপদ, ঘরে বাহিরে শত্রু সকলেই প্রাণ লইতে উদ্যত। আমার শরীর অবশ হইয়া আসিল; কথা কহিতে কষ্ট হইতেছে। যত শীঘ্র হয়, আমাকে মদিনায় লইয়া চল।”

 মুসাল নগরবাসী অনেকেই হাসানের দুঃখে দুঃখিত হইয়া কহিতে লাগিলেন: “তাঁহাকে মদিনায় পাঠাইয়া দেওয়াই সাব্যস্ত হইল।” এব্‌নে আব্বাস্ হাসানকে লইয়া মদিনায় যাত্রা করিলেন।

 যেখানে যমদূতের দৌরাত্ম্য নাই, হিংসাবৃত্তিতে হিংস্র লোকের এবং হিংস্র জন্তুর প্রবৃত্তি নাই, খাদ্যখাদকের বৈরীভাব নাই, নিয়মিত সময়ে হাসান সেই পবিত্র ‘রওজা মোবারকে’ আসিয়া উপস্থিত হইলেন, এবং সর্ব্বাঙ্গে রওজার ধূলা মাখিয়া ঈশ্বরের নিকট আরোগ্য প্রার্থনা করিলেন। ঈশ্বরানুগ্রহে বিষের যন্ত্রণা অনেক লাঘব হইল। কিন্তু আঘাতের বেদনা—