পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৯
মহরম পর্ব্ব—ষোড়শ প্রবাহ

নিষ্ঠুর অত্যাচার কে করিয়াছে? সে পাপীর পাপ-শরীরে রক্ত-মাংসের লেশমাত্র কি নাই? নিশ্চয়ই সে হৃদয় দুর্জ্জয় পাষাণে গঠিত। হায় হায়! চাঁদমুখখানি একেবারে মলিন হইয়া গিয়াছে।”—এইরূপে কাঁদিয়া কাঁদিয়া মায়মুনা আরও কিছু বলিতে অগ্রসর হইতেছিল, হাসানের বিরক্তিভাব ও কাসেমের নিবারণে তাহার সে চেষ্টা থামিয়া গেল।—চক্ষের জলও আর সে ফেলিতে পারিল না; মুখের কথা তাহার মুখেই রহিয়া গেল। চোখের জল অলক্ষিতে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়িয়া আপনিই আবার শুষ্ক হইল।

 রোগীর পথ্য লইয়া জয়নাব সেই গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলেন। জাএদা আড়নয়নে বিষদৃষ্টিতে তাঁহাকে দেখিয়াই উঠিয়া গেলেন। মায়মুনাও হাসনেবানুর আসিবার সাড়া পাইয়া আস্তে আস্তে গৃহত্যাগ করিল।

ষোড়শ প্রবাহ

 মায়মুনার সহিত জাএদার কথোপকথন হইতেছে। জাএদা বলিতেছেন, “ঈশ্বর যাহাকে রক্ষা করেন, কিছুতেই তাহার মরণ নাই। মানুষের পেটে,—বিষ হজম হয়; একবার নয়, কয়েকবার! আমি কেন জয়নাবের সুখের তরী ডুবাইতে বসিয়াছি? আমি কেন জয়নাবের সর্ব্বনাশ করিতে গিয়া আপন হাতে স্বামীর প্রাণ বিনাশ করিতে দাঁড়াইয়াছি? যে চক্ষু সর্ব্বদাই যাহাকে দেখিতে ইচ্ছা করিত, জয়নাবের চক্ষু পড়িয়া অবধি সেই চক্ষু আর তাহাকে দেখিতে চায় না। সেই প্রিয় বস্তুকে একেবারে চক্ষের অন্তর করিতে—জগৎ চক্ষুর অন্তর করিতে—কতই যত্ন, কতই চেষ্টা করিতেছি। যে হস্তে কতই সুখাদ্য দ্রব্য খাইতে দিয়াছি, এখন সেই হস্তে বিষ দিতেও একটু আগুপছু চাহিতেছি না।—কিন্তু কাহার জন্য? যে স্বামীর একটু অসুখ হইলে যে জাএদার প্রাণ কাঁদিত, এখন সেই স্বামীর প্রাণ হরণ করিতে না পারিয়া সেই জাএদা আজ বিরলে বসিয়া কাঁদিতেছে!—কিন্তু কাহার জন্য? মায়মুনা! আমি নিশ্চয় বুঝিলাম, হাসানের মরণ নাই! জাএদারও আর সুখ নাই।”

 মায়মুনা কহিল, “চেষ্টার অসাধ্য কিছুই নাই। একবার, দুবার,