পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৩
মহরম পর্ব্ব—ষোড়শ প্রবাহ

ফিরিয়া আসিতে বিলম্ব আছে। এখন একবার যাইয়া দেখি, যদি সুযোগ পাই, তবে এই-ই উপযুক্ত সময়।”

 জাএদা বিষের পুঁটুলি লইয়া চলিলেন। মায়মুনাও তাঁহার অজ্ঞাতসারে পাছে পাছে চলিল। অন্ধকার রজনী,চান্দ্রমাস রবিয়ল আওয়ালের প্রথম তারিখ। চন্দ্র উঠিয়াই অমনি অস্ত গিয়াছে। ঘোর অন্ধকার। জাএদা সাবধানে সাবধানে পা ফেলিয়া ফেলিয়া যাইতে লাগিলেন। স্বামীর শয়ন-গৃহের দ্বারের নিকটে যাইয়া কিছুক্ষণ দাঁড়াইয়া, গৃহমধ্যস্থিত সকলে জাগরিত কি নিদ্রিত, তাহা পরীক্ষা করিলেন। গৃহদ্বার যে বদ্ধ নাই, তাহা তিনি পূর্ব্বেই লক্ষ্য করিয়া গিয়াছেন। কারণ, হাসনেবানু স্বামীর আরোগ্যলাভার্থ ঈশ্বরের উপাসনা করিতে গিয়াই জাএদার গৃহপ্রবেশের সুবিধা করিয়া রাখিয়া গিয়াছেন।

 গায়ের ভর গায়ে রাখিয়া, হাতের জোর হাতে রাখিয়া, অল্পে অল্পে দ্বার মুক্ত করিয়া গৃহের মধ্যে প্রবেশ করিয়া জাএদা দেখিলেন—দীপ জ্বলিতেছে। এমাম হাসান শয্যায় শায়িত,—জয়নাব বিমর্ষ বদনে হাসানের পা-দুখানি আপন বক্ষে রাখিয়া শুইয়া আছেন। অন্যান্য পরিজনেরা শয্যার চতুষ্পার্শ্বে ভিন্ন ভিন্ন শয্যায় শয়ন করিয়াছেন। নিশ্বাসের শব্দ ভিন্ন সে গৃহে তখন আর কোন শব্দই নাই।

 দ্বীপের আলোতে জয়নাবের মুখখানি জাএদা আজ ভাল করিয়া দেখিলেন। নিদ্রিত অবস্থায় স্বাভাবিক আকৃতির শোভা যেরূপ দেখায়—জাগ্রত অবস্থায় বোধ হয় তেমন শোভা কখনই দেখা যায় না। কারণ, জাগ্রত অবস্থায় কৃত্রিমতার ভাগ অনেক অংশে বেশী হইয়া পড়ে। জাএদা গৃহের মধ্যস্থ শায়িত ব্যক্তি ও দ্রব্যসমূহের প্রতি একে একে কটাক্ষপাত করিলেন। সোরাহীর প্রতি দৃষ্টি পড়িবামাত্রই তিনি সোরাহীর দিকে অগ্রসর হইতে লাগিলেন। দুই এক পদ অগ্রসর হইয়া, ক্ষণেক দাড়াইয়া, পশ্চাতে ও অন্যান্য দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া, আবার দুই এক পদ অগ্রসর হইতে লাগিলেন। ক্রমে সোরাহীর নিকটে যাইয়া দাঁড়াইলেন। আবার গৃহমধ্যস্থিত সকলের মুখের দিকে তাকাইয়া, এমামের মুখের দিকে চক্ষু ফেলিলেন। তাহার পর বিষের