পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১০৮

হইয়াছে। মাতামহের বাক্য অলঙ্ঘনীয়। ভাই! ঈশ্বরের কার্য্যও অখণ্ডনীয়।”

 সবিষাদে এবং সরোষে হোসেন বলিতে লাগিলেন, “আমি আপনার চির আজ্ঞাবহ দাস, বিশেষ স্নেহের পাত্র, এবং চির-আশীর্ব্বাদের আকাঙক্ষী— মিনতি করিয়া বলিতেছি, বলুন ত, আপনাকে এ বিষ কে দিয়াছে?”

 “ভাই তুমি কি জন্য বিষদাতার নাম জিজ্ঞাসা করিতেছ? তুমি কি ইহার প্রতিশোধ লইবে?”

 হোসেন শষ্যা হইতে উঠিয়া অতিশয় রোষতরে দুঃখিতস্বরে বলিতে লাগিলেন, “আমার প্রাণের পূজনীয় ভ্রাতাকে,—এক মাতার উদরে যে ভ্রাতা অগ্রে জন্মিয়াছে, সেই ভ্রাতাকে—আমি বাঁচিয়া থাকিতে যে নরাধম বিষপান করাইয়াছে —সে কি অমনি বাঁচিয়া যাইবে? আমি কি এমনি দুর্ব্বল, আমি কি এমনি নিঃসাহসী, আমি কি এমনি ক্ষীণকায়, আমি কি এমনি কাপুরুষ, আমার হৃদয়ে কি রক্ত নাই, ভ্রাতৃস্নেহ নাই যে, ভ্রাতার প্রাণনাশক বিষপ্রদায়কের প্রতিশোধ লইতে পারি না? যে আজ আমার একটি বাহু ভগ্ন করিল, অমুল্য ধন সহোদর-রত্ন হইতে যে আজ আমাকে বঞ্চিত করিল, যে পাপিষ্ঠ আজ তিনটি সতী স্ত্রীকে অকালে বিধরা করিল, আমি কি তার কিছুই করিব না? যদি সে নরাধমের কোন সন্ধান জানিয়া থাকেন, যদি তাহাকে চিনিয়া থাকেন, যদি অনুমানে কিছু অনুভব করিয়া থাকেন, এ আজ্ঞাবহ চিরকিঙ্করকে বলুন, আমি এখনই আপনার সম্মুখে তাহার প্রতিবিধান করিতেছি। সেই পাপাত্মা বিজন বনে, পর্ব্বতগুহায়, অতলজলে, সপ্ততল মৃত্তিকা মধ্যে যেখানেই থাকুক, হোসেনের হস্তে তাহার পরিত্রাণ নাই। হয় আমার প্রাণ তাহাকে দিব, নয় তাহার প্রাণ আমি লইব।”

 অনুজকে হস্তে ধরিয়া নিকটে বসাইয়া হাসান বলিতে লাগিলেন, “ভাই। স্থির হও। আমি আমার বিষদাতাকে চিনি। সে আমার সহিত যেরূপ ব্যবহার করিল, আমি সমুদয় জানিতে পারিয়াছি। ঈশ্বরই তাহার বিচার করিবেন। আমার কেবল এইমাত্র আক্ষেপ যে, বিনা কারণে সে আমাকে নির্য্যাতন করিল। আমার ন্যয় অনুগত স্নেহশীল বন্ধুকে বধ করিয়া সে