কি সুখ লাভ করিল, তাহা বুঝিতে পারিলাম না। যে কারণেই হউক, যে লােভেই হউক, যে আশায়-ই হউক, নিরপরাধে সে আমাকে নির্য্যাতন করিয়া চিরবন্ধুর প্রাণবধ করিল, দয়াময় পরমেশ্বর তাহার আশা কখনই পূর্ণ করিবেন না। দুঃখের বিষয় এই যে, সে আমাকে চিনিতে পারিল না। যাহা হউক, ভাই! তাহার নাম আমি কখনই মুখে আনিব না। তাহার প্রতি আমার রাগ, হিংসা, দ্বেষ—কিছুই নাই। ঈশ্বরের নামে শপথ করিয়া বলিতেছি, আমার বিষদাতার মুক্তির জন্য ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিব। যে পর্য্যন্ত ঈশ্বরের নিকট হইতে তাহাকে মুক্ত করাইতে না পারি, সে পর্য্যন্ত স্বর্গের সােপানে পা রাখিব না। ভাই! ক্রমেই আমার বাকশক্তি রােধ হইতেছে। কত কথা মনে ছিল, কিছুই বলিতে পারিলাম না। চতুর্দ্দিক যেন আমি অন্ধকারময় দেখিতেছি।” আবুল কাসেমের হস্ত হােসেনের হস্তে সমর্পণ করিয়া স্নেহাচিত্তে হাসান কাতরস্বরে পুনরায় কহিতে লাগিলেন, “ভাই! ঈশ্বরের দোহাই, আমার অনুরােধ,— তােমার কন্যা সখিনার সহিত কাসেমের বিবাহ দিও। আর ভাই! আমার বিষদাতার যদি সন্ধান পাও, কিম্বা কোন সূত্রে সে যদি ধরা পড়ে,—তবে তাহাকে কিছু বলিও না;—ঈশ্বরের দোহাই তাহাকে ক্ষমা করিও।”—যন্ত্রণাকুল এমাম ব্যাকুলভাবে অনুজকে এই পর্য্যন্ত বলিয়া সস্নেহে কাসেমকে বলিলেন, “কাসেম! বৎস! আশীর্ব্বাদ করি, তুমি চিরজীবী হও। আর বাপ! এই কবচটি সর্ব্বদা হস্তে বাঁধিয়া রাখিও। যদি কখনও বিপদগ্রস্ত হও, সে বিপদ হইতে রক্ষা পাইবার উপায় যদি নিজ বুদ্ধিতে কিছুই স্থির করিতে না পার, তবে এই কবচের অপর পৃষ্ঠে লক্ষ্য করিও; যাহা লেখা দেখিবে, সেইরূপ কার্য্য করিবে। সাবধান! তাহার অন্যথা করিও না।”
পরে কিয়ৎক্ষণ নিস্তব্ধ থাকিয়া উপর্যুপরি তিন চারিটি নিশ্বাস ফেলিয়া হােসেনকে সম্বোধনপূর্ব্বক মুমূর্ষু হাসান পুনরায় কহিলেন, “ভাই, ক্ষণকালের জন্য তােমরা সকলে একবার বাহিরে যাও; কেবল জাএদা একাকিনী এখানে উপস্থিত থাকুক। জাএদার সহিত নির্জ্জনে আমার একটি বিশেষ কথা আছে।”
সকলেই আজ্ঞা পালন করিলেন। শয্যার নিকটে জাএদাকে ডাকিয়া