পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
বিষাদ-সিন্ধু উপক্রমণিকা
উপক্রমণিকা

খ বিষাদ-সিন্ধু—উপক্রমণিক। তাঁহারা বলিতে লাগিলেন—“প্রভুর অবিদিত কিছুই নাই; কাহার সন্তানের দ্বারা এরূপ সাংঘাতিক কাৰ্য্য সংঘটিত হইবে,—শুনিতে পাইলে তাহার প্রতিকারের উপায় করিতে পারি। যদি তাহা ব্যক্ত না করেন, তবে আমরা অদ্যই বিষপান করিয়া আত্মবিসৰ্জন করিব। যদি তাহাতে পাপগ্রস্ত হইয়া নারকী হইতে হয়, তবে সকলেই অদ্য হইতে আপন আপন পত্নীগণকে একেবারে পরিত্যাগ করিব। প্রাণ থাকিতে আর স্ত্রী-মুখ দেখিব না, স্ত্রীলােকের নামও করিব না।” প্রভু মােহাম্মদ বলিলেন, “ভাইসকল! ঈশ্বরের নিয়ােজিত কাৰ্যে বাধা দিতে এ জগতে কাহারও সাধ্য নাই, তাহার কলম রদ করিতে কাহারও ক্ষমতা নাই। তাহার আদেশ অলঙ্ঘনীয়। তবে তােমরা অবশ্যম্ভাবী ঘটনা শ্রবণ করিয়া কেন দুঃখিত থাকিবে ? নিরপরাধিণী সহধৰ্ম্মিণীগণের প্রতি শাস্ত্রের বহিভূত কাৰ্য্য করিয়া অবলগণের মনে কেন ব্যথা দিবে ? তাহাও ত মহাপাপ! তােমাদের কাহারও মনে দুঃখ হইবে বলিয়াই আমি তাহার মূল বৃত্তান্ত প্রকাশ করিতে ইতস্ততঃ করিতেছি। নিতান্ত পক্ষেই যদি শুনিতে বাসনা হইয়া থাকে, বলিতেছি শ্রবণ কর :--“তােমাদের মধ্যে প্রিয়তম মাবিয়ার এক পুত্র জন্মিবে। সেই পুত্র জগতে এজিদ নামে খ্যাত হইবে; সেই এজিদ হাসান-হোসেনের পরম শত্রু হইয়া তাহাদেব প্রাণ বধ করাইবে। যদিও মাবিয়া এ পর্যন্ত বিবাহ করে নাই, তথাপি এই অসীম জগদ্বিধান জগদীশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘন হইবার নহে, কখনই হইবে না। সেই অব্যক্ত সুকৌশলসম্পন্ন অদ্বিতীয় প্রভুর আদেশ কখনই ব্যর্থ হইবে না।” মাবিয়া ধৰ্ম্ম সাক্ষী করিয়া প্রতিজ্ঞা করিলেন, “জীবিত থাকিতে বিবাহের নাম করিব না; নিজে ইচ্ছা করিয়া কখনও স্ত্রীলােকের মুখ পর্যন্তও দেখিব না।” প্রভু মােহাম্মদ কহিলেন, “প্রিয় মাবিয়া, ঈশ্বরের কাৰ্য্য ! তােমার মত ঈশ্বরভক্ত লােকের এরূপ প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হওয়া নিতান্ত অনুচিত। তাঁহার মহিমার পার নাই, ক্ষমতার সীমা নাই, কৌশলের অন্ত নাই।” এই সকল কথার পর সকলেই আপন আপন বাটিতে চলিয়া গেলেন। কিছুদিন পরে একদা মাবিয়া মুত্রত্যাগ করিয়া কুলুখ লইয়াছেন সেই --চিল, জলের পরিবর্তে ঢিল ব্যবহার করা শাস্ত্রসঙ্গত ।