পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১১৪

হইল! এখন অন্ধকার। মায়মুনার সহিত জাএদা বিবি চুপি চুপি বাড়ীর বাহির হইলেন। কাহারও সহিত দেখা হইল না। কেবল একটি স্ত্রীলোকের ক্রন্দন-স্বর জাএদার কর্ণে প্রবেশ করিল। জাএদা দাড়াইলেন; বিশেষ মনোযোগের সহিত শুনিয়া আপনা-আপনি বলিতে লাগিলেন, “তোকে কাঁদাতেই এই কাজ করিয়াছি। যদি স্বামীকে ভালবাসিয়া থাকিস, তবে আজ কেন,— চিরকালই কাঁদিবি। চন্দ্র, সূর্য্য, তারা, দিবা, নিশা সকলেই তোর কান্না শুনিবে! কিন্তু তাহা হইলেই কি তোর দুঃখ শেষ হইবে? তাহা মনে করিস্ না। যদি জাএদা বাঁচিয়া থাকে, তবে দেখিস জাএদার মনের দুঃখের পরিমাণ কত? শুধু কাঁদাইয়াই ছাড়িবে না—আরও অনেক আছে। এই ত আজ তোর জন্য,—পাপীয়সি! কেবল তোরই জন্য জাএদা অজি স্বামীঘাতিনী বলিয়া পরিচিত হইল; আজ আবার তোরই জন্য জাএদা এই স্বামীগৃহ পরিত্যাগ করিয়া চলিল।”

 তীব্রস্বরে এইরূপ কথা বলিতে বলিতে মায়মুনার সহিত দ্রুতপদে জাএদা বাড়ীর বাহির হইলেন; বাহির হইয়াই দেখিলেন: কয়েকজন সৈনিক পুরুষ অস্ত্রেশস্ত্রে সুসজ্জিত হইয়া গমনোপযোগী বাহনাদির সম্মুখে উপস্থিত। কেহ কোন কথা বলিল না। সৈনিক পুরুষ মায়মুনার ইঙ্গিতে জাএদাকে অভিবাদন করিয়া বিশেষ মানের সহিত একটি উষ্ট্রে আরোহণ করাইল। মায়মুনাও উষ্ট্রপৃষ্ঠে আরোহণ করিল। কিছু দূর যাইবার পর ছদ্মবেশী মারওয়ান তাঁহাদের সঙ্গে একত্র মিলিত হইলেন। নগর প্রান্তের সেই নির্দ্দিষ্ট পর্ব্বত গুহারসন্নিকটে আসিয়া মায়মুনার সহিত মারওয়ানের শিষ্টাচার সম্মত অনেক কথোপকথন হইল। অনন্তর মারওয়ান আরও বিংশতি জন সৈন্য সজ্জিত করিয়া জাএদার সহিত দিয়া তাঁহাকে দামেস্কে পাঠাইয়া দিলেন।

 রজনী প্রভাতে হোসেনের পরিজনেরা দেখিলেন: জাএদা গৃহে নাই। শেষে হোসেনও সেই কথা শুনিলেন। তিনি অনেক সন্ধান করিলেন, কোন স্থানেই জাএদার সন্ধান পাওয়া গেল না। জাএদা কেন গৃহত্যাগিনী হইলেন, সে কথা বুঝাইয়া বলিতে কি বুঝিতে কাহারও বাকী রহিল না। সকলেই বলিতে কাগিল, “কোন্ প্রাণে জাএদা আপন হাতে বিষ পান করাইয়া প্রাণের প্রিয়তম