পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৯
মহরম পর্ব্ব—অষ্টাদশ প্রবাহ

কালের কার্য্যকলাপ অর্থাৎ বিবাহের পরবর্ত্তী ঘটনাবলী,—যাহা তাঁহার অন্তরে চিরনিহিত রহিয়াছে, তাহারই কোন না কোন অংশ লইয়া স্বপ্নে ব্যতিব্যস্ত রহিয়াছেন। হাস্‌নেবানুও স্বপ্নযোগে স্বামীর জ্যোতির্ম্ময় পবিত্র দেহের কান্তি দেখিয়া কতই আনন্দ অনুভব করিতেছেন! স্বর্গের অপরিসীম সুখভোগে লালায়িত হইয়া ইহজীবন ত্যাগে স্বামী-পদ প্রান্তে থাকিতে যেন ঈশ্বরের নিকট কতই আরাধনা করিতেছেন! জাএদা, বোধ হয়, এক এক বার ভীষণ মূর্ত্তি স্বপ্নে দেখিয়া নিদারুণ আতঙ্কে জড়সড় হইতেছেন, ফুকারিয়া কাঁদিতে পারিতেছেন না, পলাইবার উপযুক্ত স্থানও খুঁজিয়া পাইতেছেন না। স্বপ্নকুহকে ত্রস্তপদে যাইবারও শক্তি তাঁহার নাই, মনে মনে কাঁদিয়া কাঁদিয়া কতই মিনতি করিতেছেন। আবার সে-সকলই যেন কোথায় মিশিয়া গেল। জাএদা যেন রাজরাণী, শত শত দাসী সেবিতা, এজিদের পাটরাণী, সর্ব্বময় গৃহিণী! আবার তাহাও কোথায় মিশিয়া গেল! জাএদা যেন স্বামীর বন্দিনী, প্রাণবিনাশিনী বলিয়া অপরাধিনী;—ধর্ম্মাসনে এজিদ যেন বিচারপতি! মায়মুনা টাকার ভার আর বহিতে ও সহিতে পারিতেছে না। এত টাকা লইয়া কি করিবে? কোথায় রাখিবে? আবার যেন ঐ টাকা কে কাড়িয়া লইল! মায়মুনা কাঁদিতেছে। টাকা-অপহরক বলিতেছে—“রে পাপীয়সি! এই নে! তোর এ পাপপূর্ণ টাকা লইয়া আমি কি করিব?” এই বলিয়া টাকা নিক্ষেপ করিয়া সে মায়মুনার শিরে যেন আঘাত করিতে লাগিল। মায়মুনা কাঁদিয়াই অস্থির! তাহার কান্নার রবে জাএদার নিদ্রাভঙ্গ হইল। এজিদের বিচার হইতেও তিনি নিষ্কৃতি পাইলেন!

 যে শয়ন গৃহে জাএদা ও মায়মুনা শুইয়াছিলেন, সেই গৃহে আর আর সকলে নিদ্রিত; কেবল তাঁহারা দুইজনে জাগিয়া আছেন, উভয়ে পরস্পর অনেক কথাই কহিতে লাগিলেন।

 এজিদ সুরা প্রভাবে ঘোর নিদ্রাভিভূত। অনেক দিবসের পর আজ, বোধ হয়, পিতাকে স্বপ্নে দেখিয়া বলিয়া উঠিলেন “আমাকে রক্ষা করুন। আমি আর কখনই হাসানের অনিষ্ট করিব না।”

 ক্রমে ক্রমে এজিদের মাদকতার অনেক লাঘব হইয়াছে; কিন্তু পিপাসা