পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২১
মহরম পর্ব্ব—অষ্টাদশ প্রবাহ

আমি সে দিকে লক্ষ্য করি নাই। রাজ্যবিস্তারই আমার কর্ত্তব্য কার্য। বিশেষতঃ মদিনারাজ্যের শাসনভার নিঃসহায় নির্ধন ভিখারীর হস্তে থাকা অনুচিত বিবেচনা করিয়া প্রথমতঃ কাসেদের দ্বারা তাহাদিগকে আমার বশ্যতা স্বীকার করিবার আদেশ করা হইয়াছিল। সে কথা তাহারা অবহেলা করিয়া, দামেস্কসিংহাসনের অবমাননা করিয়া কাসেদকে বিশেষ তিরস্কারের সহিত আমার লিখিত পত্রটি শতখণ্ডে খণ্ডিত করিয়া, উত্তর-স্বরূপ তাহাই কাসেদের হস্তে পুনঃ প্রেরণ করিয়াছিল। সেই কারণেই আমি যুদ্ধ ঘােষণা করি; প্রিয় মন্ত্রী মারওয়ানকে সেই যুদ্ধে “সেপাহ্-সালার” (প্রধান সৈন্যাধ্যক্ষ) পদে বরণ করিয়া বহুসংখ্যক সৈন্যসহ হাসানকে বাঁধিয়া আনিতে মদিনায় প্রেরণ করি। আমার সৈন্যগণের মধ্যে অনেকেই বিশ্বাসঘাতকতা করিয়া হাসানের পক্ষে মিলিত হয় এবং দামেস্কের অবশিষ্ট সৈন্যদিগকে আক্রমণ করিয়া পরাস্ত করে। কি করি, চিরশত্রু দমন না করিলেও নহে, এ দিকে সৈন্যদিগের কূট চক্রে বাধ্য হইয়া হাসানের প্রাণ কৌশলে গ্রহণ করাই যুক্তিসিদ্ধ বিবেচিত হয়। এই যে কাষ্ঠাসনােপরি উপবিষ্টা বিবি মায়মুনাকে দেখিতেছেন, ইহার কল্যাণে—আর এই রজতাসনে উপবিষ্টা বিবি জাএদার সাহায্যে আমার চিরশত্রু বিনষ্ট হইয়াছে। বিবি জাএদা আমার জন্য বিস্তর পরিশ্রম করিয়াছেন। কয়েকবার স্বহস্তে আপন স্বামী হাসানকে বিষপান করাইয়াছিলেন, শেষে হীরকচূর্ণ জলে মিশাইয়া তাহাকে পান করাইলেন। তাহাতেই চিরশত্রু—আমার চিরশত্রু ইহজগৎ পরিত্যাগ করিয়াছে। আমি এই মহােদয়ার কৃপাতেই শত্রুবিহীন হইয়াছি। এই গুণবতী রমণীর অনুগ্রহেই আমি প্রাণে বাঁচিয়া আছি, এই সদাশয় ললনার কৌশলেই আজ আমার মন কিঞ্চিৎ শান্তিলাভ করিয়াছে। বহু চেষ্টা ও বহু পরিশ্রমের ফল এই মহামতি যুবতীর দ্বারাই সুপক্ক হইয়া ফলিয়াছে। আর এই বিধি মায়মুনা, ইহার সহিত এই কথা ছিল যে, যে কোন কৌশলে, যে কোন কুহকেই হউক, হাসানকে প্রাণে মারিতে পারিলে ইনি সহস্র স্বর্ণমুদ্রা পারিতােষিক প্রাপ্ত হইবেন।”

 ইঙ্গিতমাত্র কোষাধ্যক্ষ সহস্র স্বর্ণমুদ্রাপরিপূর্ণ থলিয়া আনিয়া বিবি মায়মুনার সম্মুখে রাখিয়া দিয়া সসন্ত্রমে পূর্ব্বস্থানে পূর্ব্ববৎ কড়জোড়ে দণ্ডায়মান রহিল।