পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৯
মহরম পর্ব্ব—ঊনবিংশ প্রবাহ

আপনার বুদ্ধির অনেক ভ্রম হইয়াছে। পরকাল ভাবিয়া জগতের অস্থায়িত্ব বুঝিয়া, নশ্বর মানব-শরীর চিরস্থায়ী নহে স্মরণ করিয়া, রাজ্যবিস্তারে বিমুখ, শত্রুদমনে শিথিল ও পাপভয়ে রাজকার্য্যে ক্ষান্ত হওয়া নিতান্তই মূঢ়তার কার্য্য। আপনি যুদ্ধে ক্ষান্ত দিয়া হাসানের বংশের সহিত সখ্যভাব সৃজন করিতে অনুরোধ করিতেছেন; আমি বলিতেছি, তিলার্দ্ধকাল বিলম্ব না করিয়া পুনরায় যুদ্ধযাত্রা করাই উচিত এবং কর্ত্তব্য। এমন শুভ অবসর আর পাওয়া যাইবে না। শত্রুকে সময় দিলেই দশ গুণ বল দান করা হয়, একথা কি আপনি ভুলিয়াছেন? যুদ্ধে ক্ষান্ত দিয়া মদিনা হইতে সৈন্যগণকে উঠাইয়া আনিলে কত পরিমাণ বলের লাঘব হইবে? নায়কবিহীন হইলে তাহার পশ্চাদবর্ত্তী নেতৃদলকে যুদ্ধে পরাস্ত করিতে কতক্ষণ লাগে?”

 হাসানকে সম্বোধন করিয়া এজিদ বলিলেন, “মারওয়ান যাহা বলিতেছেন, তাহাই যুক্তিসঙ্গত! যত বিলম্ব ততই অমঙ্গল। এই যুদ্ধের প্রধান নায়কই মারওয়ান। মারওয়ানের মতই আমার মনোনীত। শত্রুকে অবসর দিতে নাই, দিবও না। মারওয়ান! আর কোন কথাই নাই; যে পরিমাণ সৈন্য মদিনায় প্রেরিত হইয়াছে, আমি তাহার আর চতুর্গুণ সৈন্য সংগ্রহ করিয়া এখানে রাখিয়াছি। যাহা তোমার ইচ্ছা হয়, লইয়া মদিনায় যাত্রা কর; আমি এক্ষণে হোসেনের মস্তক দেখিতে উৎসুক রহিলাম। প্রথমে হোসেনের মস্তক দামেস্কে পাঠাইবে, তাহার পর জয়নাব ও হাসনেবানু প্রভৃতি সকলকে কারারুদ্ধ করিয়া আনিবে।” এই আজ্ঞা করিয়াই পাষাণে গঠিত নির্দ্দয়হৃদয় এজিদ সভা ভঙ্গ করিলেন। মারওয়ান বাজাজ্ঞা প্রতিপালনে তৎপর হইয়া এজিদের নিকট হইতে বিদায় লইলেন।