বিষাদ-সিন্ধু—উপক্রমণিকা তাঁহার মনকে আকর্ষণ করিল। তখন পুত্রের প্রাণহরণ করিবেন কি, নিজেই পুত্রের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত ! আপন প্রাণ অপেক্ষাও তিনি এজিদকে অধিক ভালবাসিতে লাগিলেন। বয়ােবৃদ্ধির সহিত ভালবাসাও বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। কিন্তু সময়ে সময়ে সেই নিদারুণ হৃদয়বিদারক বাক্য মনে করিয়া তিনি নিতান্ত দুঃখিত হইতেন। কিছুদিন পরে মাবিয়া দামেস্ক নগরে স্থায়িরূপে বাস করিবার বাসনা প্রভু মােহাম্মদ ও মাননীয় আলীর নিকটে প্রকাশ করিয়া অনুমতি প্রার্থনা করিলেন। তিনি আরও বলিলেন, “এজিদের কথা আমি ভুলি নাই। হাসান-হোসেনের নিকট হইতে তাহাকে দূরে রাখিবার অভিলাষেই আমি মদিনা পরিত্যাগ করিবার সঙ্ক করিতেছি।” মাননীয় আলী সরল ও সন্তুষ্টচিত্তে জ্ঞাতি-ভ্রাতা মাবিয়ার প্রার্থনা গ্রাহ করিয়া নিজ অধিকৃত দামেস্ক নগর ভঁহাকে অর্পণ করিলেন। প্রভু মােহাম্মদ কহিলেন, ‘মাবিয়া ! দামেস্ক কেন, এই জগৎ হইতে অন্য জগতে গেলেও ঈশ্বরের বাক্য লঙঘন হইবে না।” মাবিয়া লজ্জিত হইলেন, কিন্তু পূর্ব সঙ্কল্প পরি ত্যাগ করিলেন না। অল্প দিবস মধ্যে তিনি সপরিবারে মদিনা পরিত্যাগ করিয়া দ:মেস্ক নগরে গমন করিলেন এবং তাত্য রাজসিংহাসনে উপবেশন করিয়া এজ পালন ও ঈশ্বরের উপাসনায় অধিকাংশ সময় যাপন করিতে লাগিলেন। এদিকে প্রভু মােহাম্মদ হিজরী ১১ সনের ১২ই রবিয়ল-আউওয়াল সােমবার বেলা ৭ম ঘটিকার সময় পবিত্রভূমি মদিনায় পবিত্র দেহ রাখিয়া স্বর্গবাসী হইলেন। প্রভুর দেহত্যাগের ছয় মাস পরে বিবি ফাতেমা { প্রভু-কন্যা, হাসান-হোসেনের জননী, মহাবীর আলীর সহধর্মিণী ) হিজরী ১১ সনে পুত্র ও স্বামী রাখিয়! জান্নাতবাসিনী হইলেন। মহাবীর আলী হিজরী ৪০ সনের রমজান মাসের চতুর্থ দিবস রবিবার দেহত্যাগ করেন। তৎপরেই মহামান্য এমাম হাসান মদিনার সিংহাসনে উপবেশন করিয়া ধৰ্ম্মনুসারে রাজ্যপালন করিতে লাগিলেন। দামেস্ক নগরে এজিদ বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে পরবর্ণিত ঘটনা আরম্ভ হইল।
- জান্নাত-স্বর্গ