পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৪২

স্বরে বলিতে লাগিলেন: আবদুল্লাহ্ জেয়াদ যাহাই লিখুক, আমি তোমাকে পুনঃপুনঃ নিষেধ করিতেছি, তুমি কখনই কুফায় গমন করিও না,—হজরতের রওজা ছাড়িয়া কোন স্থানে যাইও না। হজরত আমাকে বলিয়া গিয়াছেন, ‘হোসেন আমার রওজা পরিত্যাগ করিয়া স্থানান্তরে গমন করিলে অনেক প্রকার বিপদের আশঙ্কা’। আমি পুনঃপুনঃ নিষেধ করিতেছি, তুমি কখনও রওজা হইতে বাহির হইও না। এখানে কাহারও ভয় নাই, কোন প্রকারে শত্রুতা সাধন করিবার ক্ষমতা কাহারও নাই, তুমি স্বচ্ছন্দে নিশ্চিন্তভাবে রওজায় বসিয়া থাক।”

 হোসেন বলিলেন, “কতকাল এইভাবে বসিয়া থাকিব? কাফেরগণ ক্রমশঃই তাহাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করিয়া মদিনার নিকটে একত্রিত হইতেছে। আমি কি করিয়া কতদিন এই প্রকারে বসিয়া কাটাইব? একা আমার প্রাণের জন্য কত লোকের জীবন যাইবে? তাহা অপেক্ষা আমি কিছুদিন স্থানান্তরে বাস করি, তাহাতে দোষ কি? বিশেষতঃ কুফানগরের সমুদয় লোক মুসলমান, ধর্ম্মপরায়ণ, সেখানে যাইতে আর বাধা কি?”

 সালেমা বিবি বিরক্তভাবে বলিতে লাগিলেন, “আমি বৃদ্ধ হইয়াছি, আমার কথা তোমার গ্রাহ্য হইবে কেন? এখন যাহা ইচ্ছা হয় কর।” এই বলিয়া তিনি হোজ্‌রামধ্যে চলিয়া গেলেন। তৎপরে হোসেনের মাতার সহোদরা ভগ্নী ওম্মে কুলসুম্ হোসেনের হস্ত ধারণ করিয়া বলিতে লাগিলেন, “হোসেন! সকলের গুরুজন যিনি, প্রথমেই তিনি নিষেধ করিতেছেন, তাঁহার কথার অবাধ্য হওয়া নিতান্তই অনুচিত। বিশেষ আমিও বলিতেছি, তুমি কুফার নাম পর্য্যন্তও করিও না। কুফার নাম শুনিলে আমার হৃদয় কাঁপিয়া উঠে। তোমার কি স্মরণ হয় না যে, তোমার পিতা কুফায় যাইয়া কত কষ্ট পাইয়াছিলেন? কুফানগরবাসীরা তাঁহাকে কতই যন্ত্রণা দিয়াছিল, সে কথা কি একেবারে ভুলিয়া গিয়াছ? কুফায় যাইবার বাসনা অন্তর হইতে একেবারে দূর কর। নিশ্চিন্তভাবে রওজায় বসিয়া থাক, আমি সাহসের সহিত বলিতেছি,— জগতে এমন কেহই নাই যে, তোমার অঙ্গ স্পর্শ করে।”

 হোসেন বলিলেন, “আমার মন অত্যন্ত অস্থির হইয়াছে, তিলার্দ্ধ কালও