পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৩
মহরম পর্ব্ব—ত্রয়োবিংশ প্রবাহ

খুলিয়া রাখিব। যাহার যত ইচ্ছা, সে তাহা গ্রহণ করিতে পারিবে। কোন প্রতিবন্ধক থাকিবে না। প্রধান প্রধান সৈন্যগণ, ওমর, সীমার প্রভৃতি বলিয়া উঠিল, “মহারাজ এবারে হোসেনের মস্তক না লইয়া আর ফিরিব না।” সীমার অতি দর্পে বলিতে লাগিল—“আর কেহই পারিবে না, আমিই হোসেনের মাথা কাটিব, কাটিব—নিশ্চয় কাটিব, পুরস্কার আমিই লইব, আর কেহই পারিবে না। হোসেনের মাথা না লইয়া সীমার এ নগরে আর ফিরিবে ন। এই-ই সীমারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।”

 এজিদ বলিলেন, “পুরস্কারও তোমার জন্য ধরা রহিল।”—এই বলিয়া আবদুল্লাহ্ ও সীমারকে প্রধান সৈন্যাধ্যক্ষপদে নিযুক্ত করিয়া বিদায় করিলেন।

 পাঠকগণ! এত দিন আপনাদের সঙ্গে আসিতেছি, কোন দিন মনের কথা বলি নাই। বিষাদ-সিন্ধুতে হাস্য-রহস্যের কোন কথা নাই, তন্নিমিত্ত এ পর্য্যন্ত হাসি নাই। কাঁদিবার অনেক কথা আছে, তথাপি নিজে কাঁদিয়া আপনাদিগকে কাঁদাই নাই। আজ মন কাঁপিয়া উঠিল, সীমার হোসেনের মস্তক না লইয়া আর দামেস্কে ফিরিবে না—প্রতিজ্ঞা করিল। সীমার কে? পরিচয় এখনও প্রকাশ পায় নাই—কিন্তু ভবিষ্যতে ইহার পরিচয় অপ্রকাশ থাকিবে না। সীমারের নামে কেন যে হৃদয়ে আঘাত লাগিতেছে, জানি না। সীমারের রূপ কোন লেখকই বর্ণনা করেন নাই, আমিও করিব না। কল্পনাতুলি হস্তে তুলিয়া আজ আমি এখন সেই সীমারের রূপ-বর্ণনে অক্ষম হইলাম। কারণ, বিষাদ-সিন্ধুর সমুদয় অঙ্গই ধর্ম্মকাহিনীর সহিত সংশ্লিষ্ট। বর্ণনায় কোন প্রকার ন্যূনাধিক হইলে প্রথমতঃ পাপের ভয়, দ্বিতীয়তঃ মহাকবিদিগের মূল গ্রন্থের অবমাননা ভয়ে তাঁহাদেরই বর্ণনায় যোগ দিলাম। সীমারের বিশাল ধবল বক্ষে লোমের চিহ্নমাত্র নাই; মুখাকৃতি দেখিলেই নির্দ্দয় পাষাণহৃদয় বলিয়া বোধ হইত—দন্তরাজি দীর্ঘ ও বক্রভাবে জড়িত—প্রাচীন কবির এই মাত্র আভাষ এবং আমারও এইমাত্র বলিবার অধিকার,—নাম সীমার।

 এজিদ সৈন্যদিগকে নগরের বাহির করিয়া দিয়া ফিরিয়া আসিলেন। এবং আবদুল্লাহ জেয়াদের লিখন অনুসারে মারওয়ানকে সসৈন্যে মদিনা পরিত্যাগ