পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৫
মহরম পর্ব্ব—ত্রয়োবিংশ প্রবাহ

হইলেন। কুফার সৈন্যগণও অত্যল্প সময়মধ্যে সুসজ্জিত হইয়া পূর্ব্বতন প্রভু জেয়াদের সহিত সমরে চলিলেন। মোস্‌লেম নগরের বাহির হইয়াই দেখিলেন যে, এজিদের চিহ্নিত পতাকাশ্রেণী বায়ুর সহিত ক্রীড়া করিতেছে, যুদ্ধবাদ্য মহাঘোর রবে বাদিত হইতেছে। মোস্‌লেম সৈন্যগণকে বলিলেন, “ভাই সকল! যে এজিদ, যে মারওয়ান, যে ওত্‌বে অলীদের ভয়ে হোসেন মদিনাবাসীদের জন্য, মদিনাবাসীদিগকে বিপদ-উপদ্রব হইতে রক্ষার জন্য কুফায় আসিতে মনস্থ করিয়া অগ্রে আমাদিগকে পাঠাইয়াছেন, সেই বিধর্ম্মী কাফের তাহারই উদ্দেশ্যে, কিংবা আমাদের প্রাণ লইতে, কিংবা আমাদিগকে যে এত সাহায্য করিতেছে, সেই জেয়াদের প্রাণ বিনাশ করিতে আসিয়াছে। কুফার সৈন্য আসিতে এখনও অনেক বিলম্ব। সময় পাইলেই শত্রুর বল চতুর্গুণ বৃদ্ধি পায়। আর অপেক্ষা নাই, কুফার সৈন্য আসিবে, একত্রে যাইব, ইহা বলিয়া আর সময় নষ্ট করিব না। এস, আমরাই অগ্রে গিয়া শত্রুপক্ষকে বাধা দিয়া আক্রমণ করি।” মোস্‌লেম সহস্র সৈন্য লইয়া একেবারে শত্রুপক্ষের সম্মুখীন হইলেন; উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ আরম্ভ হইল।

 জেয়াদ কুফার সৈন্য সংগ্রহ করিয়া মোস্‌লেমের পশ্চাদ্বর্ত্তী হইলেন। নগরের অন্তসীমার শেষ তোরণ পর্য্যন্ত আসিয়া দেখিলেন, নগারের অন্ত-সীমায় যুদ্ধ আরম্ভ হইয়াছে। সৈন্যগণ অবাক হইল। সকলেই, পূর্ব্ব প্রভুর আজ্ঞা হঠাৎ লঙ্ঘন করা বিবেচনাসিদ্ধ নহে, এই বলিয়া বিরতভাবে দণ্ডায়মান রহিল।

 আবদুল্লাহ্ জেয়াদ বলিতে লাগিলেন, “আমি এত দিন মনের কথা তোমাদিগকে কিছুই বলি নাই, আজ বলিবার সময় হইয়াছে বলিয়াই এক্ষণে বলিতেছি! হোসেনকে রাজ্যদান আমার চাতুরী মাত্র। আমি মহারাজ এজিদের আজ্ঞাবহ, অনুগৃহীত, আশ্রিত এবং দামেস্কাধিপতি আমার একমাত্র পূজ্য। কারণ আমি তাঁহার অধীনস্থ প্রজা। তাঁহার দেশে হোসেনকে কৌশল করিয়া বন্দী করাই আমার মুখ্য উদ্দেশ্য। ঘটনাক্রমে তাহা হইল না। মোস্‌লেমকে যে উদ্দেশ্যে সিংহাসনে বসাইয়াছিলাম, তাহা এক প্রকার সম্পূর্ণ হইল; কিন্তু উদ্দেশ্য সফল হইল না। মহারাজ এজিদের সৈন্য আসিয়াছে,