পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৬৪

তোমাদিগকে সঁপিয়া দিলাম। শীঘ্রই এই পথ ধরিয়া চলিয়া যাও। কোন ভয়ের কারণ নাই।সর্ব্ববিপদহর জয় জগদীশ তোমাদিগকে রক্ষা করিবেন।”

 ভ্রাতৃদ্বয় বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাইয়া অঙ্গুরী লইয়া বিদায় হইলেন। এবং কুদসীয়ার পথে যাইতে লাগিলেন।

 দয়াময় এলাহীর অভিপ্রেত কার্য্যে বাধা দিতে সাধ্য কার? কার ক্ষমতা তাঁহার বিধানের বিপর্য্যয় করে? ভ্রাতৃদ্বয় সারা নিশা ত্রস্তপদে হাঁটিয়া বড়ই ক্লান্ত হইলেন। জ্যেষ্ঠ বলিলেন “ভাই, বহু দূরে আসিয়াছি। কুফা হইতে বহু দূরে কুদ্‌সীয়া নগর—এই সেই কুদ্‌সীয়া।” রাত্রিও প্রভাত হইয়া আসিল। একটু স্থির হইয়া বসিতেই চতুর্দ্দিকে ঊষার আলোক নয়নফলকে প্রতিফলিত হইতে লাগিল। ভ্রাতৃদ্বয় এখনও নির্ভয়ে বসিয়া আছেন, প্রকৃতির কল্যাণে ঘটনাচক্রে কি সাংঘাতিক ব্যাপার ঘটিয়াছে,— তাঁহারা কিছুই জানিতে পারেন নাই। অদৃষ্টলিপি খণ্ডাইতে মানুষের সাধ্য কি? ভাতৃদ্বয় সারাটি রাত্রি ত্রস্তপদে হাঁটিয়াছেন সত্য;—মনে মনে স্থির করিয়াছেন—বহু দূর আসিয়া পড়িয়াছেন; এস্থানে আর আবদুল্লাহ্ জেয়াদের ভয়ে ভাবিতে হইবে না। হা অদৃষ্ট! তাঁহাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কুদ্‌সীয়ার পথ ভুলিয়া তাঁহারা সারাটি রাত্রি কুফা নগরের মধ্যেই ঘুরিয়াছেন। এদিকে রাত্রিও প্রভাত হইল। চক্ষুর ধাঁধা ছুটিয়া গেল। প্রাণ চমকিয়া উঠিল!—জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বলিলেন, “ভাই, আমাদের কপাল মন্দ! হায়! হায়! কি করিলাম! প্রাণপণে পরিশ্রম করিয়া সারা রাত হাঁটিলাম, কি কপাল! এই ত সেই স্থান, আমাদিগকে যে স্থানে রাখিয়া মাস্কুর কুদ্‌সীয়ার পথ দেখাইয়া গিয়াছেন, এই ত সেই স্থান।” কনিষ্ঠ ভ্রাতাও চমকিয়া উঠিয়া বলিলেন, “হাঁ। ভাই! ঠিক কথা! যে স্থান হইতে তিনি বিদায় লইয়াছিলেন, এই-ই সেই পথ—সেই পথিপার্শ্বের দৃশ্য!”

 ঘটিয়াছেও তাহাই। কারাধ্যক্ষ মাস্কুর যে স্থানে তাঁহাদিগকে রাখিয়া চলিয়া গিয়াছেন, সারা নিশা ঘুরিয়া প্রভাতে আবার তাঁহারা সেই স্থানেই আসিয়াছেন।

 ভ্রাতৃদ্বয় সে সময় আকুল প্রাণে কথা বলিতে লাগিলেন।—মোহাম্মদ জ্যেষ্ঠ, এব্রাহিম কনিষ্ঠ। জ্যেষ্ঠ বলিতেছেন,—“ভাই! এখন উপায়? প্রাণের ভাই