পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৫
মহরম পর্ব্ব—ত্রয়ােবিংশ প্রবাহ

মাথার উপর হাত রাখিয়া বল—‘আমরা সাধ্যানুসারে বালকদ্বয়কে রক্ষা করিব’।

 পুত্রদ্বয় অকপটচিত্তে অঙ্গীকার করিল, বলিল, “মা! আপনি নিশ্চয় জানিবেন, বালকদ্বয়ের অনিষ্ট সম্বন্ধে আমাদের পিতার কোন কথা আমরা শুনিব না! বরং তাঁহার বিরোধী হইব। আপনার আদেশ, আপনার আজ্ঞ। পালন করিতে যদি আমাদের প্রাণও যায়, তথাপি আপনার আদেশের অন্যথা করিব না, কি পশ্চাদপদ হইব না।”

 দুই পুত্র আর গৃহিণী এক কক্ষে পরামর্শ করিতেছেন। অন্য কক্ষে অতি নির্জ্জন স্থানে ভ্রাতৃদ্বয় শুইয়া আছেন। ভিন্ন আর এক কক্ষে হারেস শুইয়া আছে। ঈশ্বরের মহিমার অন্ত নাই! মোহাম্মদ ও এব্রাহিম নির্জ্জন কক্ষে নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন, হঠাৎ মোহাম্মদ জাগিয়া ক্রন্দন করিতে করিতে এব্রাহিমকে জাগাইয়া বললেন,—“ভাই রে! আর ঘুমাইও না। শুন—স্বপ্ন-বিবরণ শুন। এখনই পিতাকে স্বপ্নে দেখিলাম। শুন, অতি আশ্চর্য্য স্বপ্ন। স্বপ্নে দেখিয়াছি, আকাশের দ্বার হঠাৎ খুলিয়া গেল। স্বর্গীয় সৌরভে জগৎ আমোদিত ও মোহিত হইল। দেখিলাম, স্বর্গীয় উদ্যানে হজরত মোহাম্মদ রসুল মকবুল (দঃ), হজরত আলী (কঃ), হজরত বিবি ফাতেমা জোহরা এবং হজরত হাসান উদ্যানে ভ্রমণ করিতেছেন। পিতৃদেব তাঁহাদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ বেড়াইতেছেন। আমরা দুই ভ্রাতা দূরে দাঁড়াইয়া আছি। ইতিমধ্যে হজরত রসুল মকবুল আমাদের পিতৃদেবকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন—মোস্‌লেম! তুমি চলিয়া আসিলে, আর তোমার পুত্র দুইটিকে জালেমের হস্তে রাখিয়া আসিলে?”

 পিতৃদেব করজোড়ে নিবেদন করিলেন,—“হজরত! এলাহীর কৃপায় তাহারাও আগামী কল্য ইন্‌শা আল্লাহ্‌র পবিত্র পদ-চুম্বনের জন্য আসিবে।”

 এব্রাহিম বলিলেন,—“ভাই, আমিও ঐ স্বপ্ন দেখিয়াছি। আর চিন্তা কি? রাত্রি প্রভাতেই আমরা পিতৃদেবের নিকটে যাইব। এস ভাই, এইক্ষণে দুই ভাই গলাগলি করিয়া একবার শয়ন করি। জগতে আমাদের আজ নিদ্রাৱ শেষ, নিশারও শেষ। আমাদের পরমায়ুরও শেষ। এস