রাত্রি প্রভাত হইতে অনেক বিলম্ব। কিন্তু আর যাইবে কোথা?”—এই বলিয়া দুই ভ্রাতার জোল্ফে জোল্ফে বন্ধন করিলেন। চুলে টান পড়ায় দুই ভাই কঁদিয়া উঠিতেই হারেস্— নির্দ্দয় হারেস্ উভয় ভ্রাতার সুললিত কোমল গণ্ডে সজোরে চপেটাঘাত করিয়া বলিলেন,—“চুপ! চুপ! কাঁদ্বি ত এখনই মাখা কেটে ফেল্বো।”
বলিতে বলিতে দুই ভ্রাতার হস্ত বন্ধন করিয়া, দ্বারে জিঞ্জির লাগাইয়া, দ্বার ঘেঁসিয়া শয্যা পাতিয়া তিনি তরবারি-হস্তে বসিয়া রহিলেন। স্বগত বলিতে লাগিলেন,—“আর ঘুমাইব না। আর কি—হোঃ হোঃ! আর কি!— প্রভাতেই মোহরের তোড়া, মোহরের ঝন্ঝনা, এইবার সুখের সীমা কত দূর—দেখিয়া লইব।”
গৃহিণী কাঁদিতে কাঁদিতে স্বামীর পা দুইখানি ধরিয়া বলিলেন,—“ছেলে দুইটির প্রতি দয়া কর।”
হারেস বলিলেন,—“দয়া ত করিবই, রাত্রিটা আছে বলিয়া ‘দয়া’ দেখিতে পাইতেছ না, একটু পরেই দয়া-মায়া সকলই দেখিবে।”
“দেখ তুমি আমার স্বামী! তোমার পায়ের উপর এই মাথা রাখিয়া বলিতেছি, ছেলে দুইটির প্রতি কোনরূপ অত্যাচার করিও না। এতিমের উপর কোনরূপ কর্কশ ব্যবহার করিতে নাই। ছেলে দুইটির প্রতি দয়া কর। টাকা কয় দিন থাকিবে?”
হারেস স্ত্রীর মাথায় পদাঘাত করিয়া বলিলেন,—“দূর হ হতভাগিনী, দূর হ!—আমার সম্মুখ হ’তে দূর হ! তোকে কি বলিব—তুই চ’লে যা। তোর কথা শুন্বো কি না! পাঁচ হাজার মোহর লক্ষীর কথায়, বুড়ী রূপসীর মায়া-কান্নায় ছাড়িয়া দিব? এ ত আমার ঘরে তোলা টাকা। দেখ,!— ফের্ আমার এই বিছানার নিকটে আস্বি ত মাথা মাটিতে গড়াইয়া দিব?”
“তোরা সকলে ভেবেছিস কি? আমার চক্ষেও ঘুম নাই! তোদের চক্ষেও ঘুম নাই! আর তোরা কখনই এ কথা মনে করিস না যে, মোস্লমের দুই পুত্র আমার হাতছাড়া হইবে,—তাহা হইবে না। আর তোরা যা ভাব্ছিস তাও হ’বে না। আমি নিশ্চয়ই বুঝিয়াছি, মোস্লেমের দুই