পুত্রকে জীবন্তভাবে মহারাজ জেয়াদের দরবারে লইয়া যাইতে আমার মত লোকের সাধ্য নাই। পথে বাহির হইলেই চারিদিকে পুরস্কারলোভী গুণ্ডার দল বালক দুইটিকে জোর করিয়া ছিনাইয়া লইয়া যাইবে। কি অন্যায় কথা! ধরিলাম আমি—পুরস্কার পাইব আমি, তাহা না হইয়া যার বল বেশী, সেই-ই বলপূর্ব্বক লইয়া মহারাজ জেয়াদের দরবারে উপস্থিত করিয়া বিজ্ঞাপিত পুরস্কার লইবে। টাকার লোভ বড় শক্ত লোভ! আমি সে সকল ভবিষ্যৎ আশঙ্কার মধ্যেই যাইব না। রাত্রি প্রভাত হইলেই মোস্লেম-পুত্রদ্বয়ের শুধু মস্তক লইয়া রাজ-দরবারে উপস্থিত হইব। তাহাতেই আশা পূর্ণ, কার্য্যসিদ্ধি! তাহাতেই মহারাজ অধিক পরিমাণে সন্তুষ্ট হইবেন!”
স্ত্রীকে সম্বোধন করিয়া হারেস বলিলেন,—“তুই স্ত্রীলোক! ওরে তুই কি বুঝ্বি? এ সকল উপার্জ্জনের অঙ্গ তুই কি বুঝ্বি রে?—ছেলে দুটাও দেখ্ছি ওদের পাগলী মায়ের কথায় পাগল হইয়াছে! আমার চক্ষেও ঘুম নাই। তোদের চক্ষেও ঘুম নাই! যা যা, তোরা বিছানায় যা!” এদিকে রাত্রি প্রভাত হইল—কুক্কুটদল সপ্তস্বরে কুফা নগরকে জাগ্রত করিতে লাগিল।
হারেস প্রত্যুষে উঠিয়াই মোস্লেমের পুত্রদ্বয়কে বন্ধন করিলেন এবং ঘোড়ার পিঠে চাপাইয়া সু-ধার তরবারি ও ঘোড়ার বাগডোর হস্তে ধরিয়া ফোরাত নদীতীরে যাইতে লাগিলেন। হারেসের দুই পুত্রও তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ দৌড়াইল। গৃহিণী কাঁদিতে কাঁদিতে মাথায় ঘা মারিতে মারিতে অশ্বপশ্চাতে ছুটিলেন। গৃহিণীও দুই পুত্রসহ গোপনে পরামর্শ করিয়াছেন, যে কোন উপায়েই হউক তাঁহারা তিনজনে একত্রে বালক দুইটিকে রক্ষা করিবেন,— উপস্থিত যমের হস্ত হইতে রক্ষা করিবেন! পুত্রদ্বয় মাতার পদস্পর্শ করিয়া প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন,—‘দেহে প্রাণ থাকিতে, আমাদের দুই ভ্রাতার শির স্কন্ধে থাকিতে, মোস্লেম-পুত্রদ্বয়ের শির দেহবিচ্ছিন্ন হইতে দিব না।’ দৌড়াইতে দৌড়াইতে সকলেই ফোরাত নদীতীরে উপস্থিত হইলেন।
হারেসের ক্ষণকাল বিলম্ব সহিতেছে না। শীঘ্র শীঘ্র কার্য্য শেষ করিয়া দুই ভ্রাতার দুইটি মাথা মহারাজ জেয়াদ-দরবারে উপস্থিত করিতে পারিলেই তাঁহার