মন কি উপকরণে গঠিত? বল শুনি। সত্যই কি মানব-রক্তমাংস তোমার দেহে নাই? অন্য কোন প্রকারে জীবনীশক্তি থাকিতে পারে? এই বালক দুইটির মুখের লাবণ্য, চক্ষের ভাব, গণ্ডস্থলের স্বাভাবিক ঈষৎ গোলাপী আভা দেখিয়াও কি তোমার মন কিছুই বলে নাই? হাতের তরবারি কি প্রকারে উর্দ্ধে উঠিল? ইহাদের বিষাদমাখা মুখের ভাব দেখিয়াও কি তরবারি নীচে নামিল না? মহারাজ এজিদ-নামদার যদি মোস্লেম-পুরদ্বয়কে দামেস্কে পাঠাইতে আদেশ করেন, তখন আমি কি করিব? উপায় কি? অল্পবয়স্ক বালক দুইটিই কি আমার বেশী ভারবোধ হইয়াছিল? তাহাদের জীবিত থাকাই কি আমার বিশেষ ভয়ের কারণ হইয়াছিল? ওহে বীর! বালকহন্তা মহাবীর! আমার ঘোষণায় কি বালকদের শিরশ্ছেদ করিয়া মাথা আনিবার কথা ছিল? না ডঙ্কা বাজাইয়া মাথা আনিবার ঘোষণা করা হইয়াছিল?”
হারেস বলিল—“শিরশ্ছেদের কথা ছিল না, ধরিয়া আনিবার আদেশ ছিল। জীবিত অবস্থায় তাহাদিগকে দরবার পর্য্যন্ত আনা দুঃসাধ্য বলিয়াই মাথা দুইটি আনিয়াছি। শত শত জন এই বালকদ্বয়ের সন্ধানে ছিল—আমাকে দরবারে আনিতে দেখিলেই তাহাদের মধ্যে কেহ না কেহ বালকদ্বয়কে কাড়িয়া লইত; মাথা সমেত বালক দুইটিকে আনিয়া স্বচ্ছন্দে পুরস্কার লাভ করিয়া চলিয়া যাইত। পরিশ্রম আমার—লাভ করিত ডাকাতদল!”
আমি বাদ্শাহ-নামদারের মঙ্গলকামী হিতৈষী। চিরশত্রুর বংশে কাহাকেও রাখিতে নাই। হয় ত সময়ে এই বালকদ্বয় বীরশ্রেষ্ঠ বীর শত্রুর ন্যায় দণ্ডায়মান হইত। আমি ইহাদিগকে একেবারে নির্ম্মূল করিয়া দিয়াছি, আমাকে স্বীকৃত পুরস্কারে পুরস্কৃত করিয়া বিদায় করুন। আজ দুই তিন রাত্রি আমার আহার নাই—নিদ্রা নাই—বিশ্রামের সময়, অবসর কিছুই নাই। এই দুইটি বালকের মস্তক গ্রহণ করিতে আমার দুইটি পুত্র এবং স্ত্রীর মাথা কাটিয়াছি।”
দরবারসমেত সকলে মহাদুঃখিত ও বিস্ময়াপন্ন হইলেন। নরপতি জেয়াদ বলিলেন,—“ওহে বীর! সে কি কথা?—”