পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চতুর্বিংশ প্রবাহ

 হােসেন সপরিবারে ষষ্টি সহস্র সৈন্য লইয়া নির্ব্বিঘ্নে কুফায় যাইতেছেন। কিন্তু এত দিন যাইতেছেন, কুফার পথের কোন চিহ্নই দেখিতে পাইতেছেন না। একদিন হোসেনের অশ্বপদ মৃত্তিকায় দাবিয়া গেল। ঘােড়ার পায়ের খুর মৃত্তিকার মধ্যে প্রবেশ করিয়া যাইতে লাগিল। কারণ কি? এইরূপ কেন হইল? কারণ অনুসন্ধান করিতে করিতে হঠাৎ প্রভু মােহাম্মদের ভবিষ্যদ্বাণী হােসেনের মনে পড়িল। নির্ভীক হৃদয়ে ভয়ের সঞ্চার হইল, অঙ্গ শিহরিয়া উঠিল! হােসেন গণনা করিয়া দেখিলেন, আজ মহর্‌রম মাসের ৮ই তারিখ। তাহাতে আরও ভয়ে ভয়ে অশ্বে কশাঘাত করিয়া কিঞ্চিৎ অগ্রে গিয়া তিনি দেখিলেন যে, এক পার্শ্বে ঘাের অরণ্য, সম্মুখে বিস্তৃত প্রান্তর। চক্ষুনির্দ্দিষ্ট সীমামধ্যে মানব কিম্বা—জীব-জন্তুর নাম মাত্র নাই; আতপ-তাপ নিবারণােপযােগী কোন প্রকার বৃক্ষও নাই, কেবল প্রান্তর—মহাপ্রান্তর। প্রান্তর-সীমা যেন গগনের সহিত সংলগ্ন হইয়া ধূ ধূ করিতেছে! চতুর্দ্দিকে যেন প্রকৃতির স্বাভাবিক স্বরে আক্ষেপ “হায়! হায়!” শব্দ উত্থিত হইয়া নিদারুণ দুঃখ প্রকাশ করিতেছে। জনপ্রাণীর নামমাত্র নাই, কে কোথা হইতে করিতেছে, তাহাও জানিবার উপায় নাই। বােধ হইল, যেন শূন্যপথে শত সহস্র মুখে “হায়! হায়!” শব্দ চতুর্দ্দিক আকুল করিয়া তুলিয়াছে।

 হােসেন সকরুণ স্বরে, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়া সঙ্গীগণকে বলিতে লাগিলেন, “ভাই সকল! হাস্য-পরিহাস দূর কর; সর্ব্বশক্তিমান জগৎ-নিদান করুণাময় ঈশ্বরের নাম মনে কর। আমরা বড় ভয়ানক স্থানে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছি। এই স্থানের নাম করিতে আমার হৃদয় কাঁপিয়া উঠিতেছে, প্রাণ ফাটিয়া যাইতেছে। ভাই রে! মাতামহ বলিয়া গিয়ছেন, যে স্থানে তােমার অশ্বপদ মৃত্তিকায় দাবিয়া যাইবে, নিশ্চয় জানিও, সেই-ই তােমার জীবন বিনাশের নির্দ্দিষ্ট স্থান এবং তাহারই নাম দাস্ত-কারবালা। মাতামহের