পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৫
মহরম পর্ব্ব—চতুর্বিংশ প্রবাহ

রহিল। হোসেন পুনরায় বলিতে লাগিলেন, “ভাই সকল, এ দিন— চিরদিন তোমাদের সুদিন থাকিবে না; কোন দিন ইহার সন্ধ্যা হইবেই হইবে। ঈশ্বরের অনন্ত ক্ষমতার প্রতি একবার দৃষ্টিপাত কর; তাঁহাকে একটু ভয় কর। ভ্রাতৃগণ! পিপাসায় জলদান মহাপুণ্য, তাহাতে আবার অল্পবয়স্ক শিশু! ভ্রাতৃগণ! ইহার জীবন তোমাদের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করিতেছে। আমি সামান্য সৈনিক পুরুষ নহি; আমার পিতা মহামান্য হরজত আলী, মাতামহ নূরনবী হজরত মোহাম্মদ, মাতা ফাতেমা জোহরা খাতুনে জেন্নাত। এই সকল পুণ্যাত্মাদিগের নাম স্মরণ করিয়াই এই শিশু সন্তানটির প্রতি অনুগ্রহ কর। মনে কর, যদি আমি তোমাদের নিকট কোন অপরাধে অপরাধী হইয়াও থাকি, কিন্তু এই দুগ্ধপোষ্য বালক ত তোমাদের কোন অনিষ্ট করে নাই, তোমাদের নিকট কোন অপরাধে অপরাধীও হয় নাই। ইহার প্রতি দয়া করিয়াই তোমরা ইহার জীবন রক্ষা কর।”

 সৈন্যগণ মধ্য হইতে একজন বলিল, “তোমার পরিচয় জানিলাম; তুমি হোসেন। তুমি সহস্র অনুনয়-বিনয় করিয়া বলিলেও তোমাকে জল দিব না। তোমার পুত্র জল-পিপাসায় জীবন হারাইবে, তাহাতে তোমার দুঃখ কি? তোমার জীবনই ত এখনই যাইবে; সন্তানের দুঃখে না কাঁদিয়া তোমার নিজের প্রাণের জন্য একবার কাঁদ—অসময়ে পিপাসায় কাতর হইয়া কারবালায় প্রাণ হারাইবে, সেই দুঃখে একবার ক্রন্দন কর, শিশুসন্তানের জন্য আর কষ্ট পাইতে হইবে না। এখনই তোমার সকল জ্বালাযন্ত্রণা একেবারে নিবারণ করিয়া দিতেছি।” এই বলিয়া সেই ব্যক্তি হোসেনের বক্ষঃ লক্ষ্য করিয়া এক বাণ নিক্ষেপ করিল। ক্ষিপ্রহস্তনিক্ষিপ্ত সেই সুতীক্ষ্ণ বাণ হোসেনের বক্ষে না লাগিয়া ক্রোড়স্থ শিশুসন্তানের বৃক্ষ বিদীর্ণ করিয়া পৃষ্ঠদেশ পার হইয়া গেল। হোসেনের ক্রোড় রক্তে ভাসিতে লাগিল।

 হোসেন বলিতে লাগিলেন, “ওরে পাষাণহৃদয়! ওরে শরনিক্ষেপ কারি! কি করিলি! এই শিশুসন্তান-বধে তোর কি লাভ হইল? হায়