পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৯৬

হায়! আমি কোন মুখে ইহাকে ফিরাইয়া লইয়া যাইব? শাহ্‌রেবানুর নিকটে গিয়াই বা কি উত্তর দিব!” হোসেন মহাখেদে এই কথা কয়েকটি বলিয়াই সরাষে অশ্বচালনা করিলেন। শিবির সম্মুখে আসিয়া মৃত সন্তান ক্রোড়ে লইয়া লম্ফ দিয়া তিনি অশ্ব হইতে অবতরণ করিলেন; শাহ্‌রেবানুর নিকটে গিয়া বলিলেন, “ধর, তোমার পুত্র ক্রোড়ে লও! আজ বাছাকে স্বর্গের সুশীতল জল পান করাইয়া আনিলাম।” শাহ্‌রেবানু সন্তানের বুকের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়াই অজ্ঞান হইয়া ভূতলে পতিত হইলেন; বলিলেন, “ওরে! কোন্ নির্দ্দয় নিষ্ঠুর এমন কার্য্য করিলি! কোন্ পাষাণ হৃদয় এমন কোমল শরীরে লৌহশর নিক্ষেপ করিলি! ঈশ্বর! সকলই তোমার খেলা! যে দিন মদিনা পরিত্যাগ করিয়াছি, সেই দিনই দুঃখের ভার মাথায় ধরিয়াছি। শিবিরস্থ পরিজনেরা সকলেই শাহ্‌রেবানুর শিশুসন্তানের জন্য কাঁদিতে লাগিল। কেহ কাহাকেও সান্ত্বনা দিতে সক্ষম হইল না। মদিনাবাসীদিগের মধ্যে আবদুল ওহাব নামক একজন বীরপুরুষ হোসেনের সঙ্গীদল মধ্যে ছিলেন। আবদুল ওহাবের মাতা এবং স্ত্রীও সঙ্গে আসিয়াছিলেন। হোসেনের এবং তাঁহার পরিজনগণের দুঃখ দেখিয়া আবদুল ওহাবের মাতা সরোষে তাঁহাকে বলিতে লাগিলেন, “আবদুল ওহাব! তোমাকে কি জন্য গর্ভে ধারণ করিয়াছিলাম? হোসেনের এই দুঃখ দেখিয়া তুমি এখনও বসিয়া আছ? এখনও তোমাকে অস্ত্রে সুসজ্জিত দেখিতেছি না? এখনও তুমি অশ্ব সজ্জিত করিয়া ইহার প্রতিশোধ লইতে অগ্রসর হইতেছ না? জল বিহনে সকলেই মরিবে, আর কতক্ষণ বাঁচিবে? ধিক্ তোমার জীবনে। কেবল কি পশুবধের জন্যই শরীর পুষিয়াছিলে? এখনও স্থির হইয়া আছ? ধিক্ তোমার জীবনে! ধিক্ তোমার বীরত্বে। হায়! হায়! হোসেনের দুগ্ধপোষ্য সন্তানটির প্রতি যে হাতে তীর মারিয়াছে, আমি কি সেই পাপীর সেই হাতখানা দেখিয়াই পরিতৃপ্ত হইব? তাহা মনে করিও না। তোমার শরসন্ধানে সেই বিধর্ম্মী নারকীর তীরবিদ্ধ মস্তক আজ আমি দেখিতে ইচ্ছা করি। হায়! হায়! এমন কোমল শরীরে যে নরাধম তীর বিদ্ধ করিয়াছে, তাহার শরীরে মানব-রক্ত, মানব-ভাব—