পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২০০

ওহাবের পদাঘাত সহ্য কর, তাহার পর অন্য কথা।”—সদর্পে এই কথা বলিয়া আবদুল ওহাব অশ্ব ঘুরাইয়া বিধর্ম্মীর নিকট যাইয়া এমনই জোরে তরবারি আঘাত করিলেন যে, এক আঘাতে অশ্বের সহিত আরোহীকে দ্বিখণ্ডিত করিয়া ফেলিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে অশ্বচক্র দিয়া শত্রুবিনাশী আবদুল ওহাব প্রত্যেক চক্রপরিবর্ত্তনে বিপক্ষগণকে আহ্বান করিতে লাগিলেন। একে একে সত্তরজন বিধর্ম্মীকে নরকে প্রেরণ করিয়া পুনরায় পরিক্রমণের জন্য শত্রুগণকে আহ্বান করিতে লাগিলেন; কিন্তু কেহই তাঁহার সম্মুখে আর অগ্রসর হইল না, দূর হইতে শর নিক্ষেপ করিয়া তাঁহাকে পরাস্ত করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। আবদুল ওহাব ভীত হইলেন না—দুই হস্তে অসি চালনা করিয়া নিক্ষিপ্ত শরজাল খণ্ডে খণ্ডে বিচ্ছিন্ন করিতে লাগিলেন। মধ্যে মধ্যে শত্রুনিক্ষিপ্ত শরে আবদুল ওহাবের গাত্র বিদ্ধ হইয়া রক্তধারা প্রবাহিত হইতে লাগিল। সে দিকে আবদুল ওহাবের দৃষ্টি নাই, কেবল শত্রু বিনাশেই তিনি কৃতসঙ্কল্প!

 বহু পরিশ্রম করিয়া আবদুল ওহাব পিপাসায় আরও কাতর হইলেন। কি করেন, কোন উপায় না পাইয়া বেগে যুদ্ধক্ষেত্র হইতে হোসেনের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইয়া বলিলেন, “হজরত! বড় পিপাসা! এই সময় ওহাবকে যদি জল দান করিতে পারেন, তাহা হইলে শত্রুকুল—”

 “জল?— জল আমি কোথা পাইব ভাই?” হোসেন অধিকতর কাতর হইয়া বলিতে লাগিলেন, “ভাই, সে ক্ষমতাই যদি থাকিত, তবে তোমার আর এমন দুর্দ্দশা হইবে কেন?”

 দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া এই সকল কথা শ্রবণ করিয়া মহা উত্তেজিত কণ্ঠে আবদুল ওহাবের জননী বলিতে লাগিলেন, “আবদুল ওহাব, যুদ্ধক্ষেত্র হইতে কি ফিরিতে আছে? তুমি যদি ইচ্ছা করিয়াও না ফিরিয়া থাক, যদি কাহারও আদেশে ফিরিয়া থাক, তাহা হইলেও কি শত্রু হাসিবে না? কি ঘৃণা! কি লজ্জা! কেন তুমি আমার গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলে? শত্রুকে পিঠ দেখাইয়া সামান্য জল-পিপাসা হইতে প্রাণ রক্ষা করিতে যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়িয়া ফিরিয়া আসিলে? তোমার ও-কলঙ্কিত মুখ আমি আর দেখিব না। আমি