পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহরম পর্ব্ব—প্রথম প্রবাহ

উপায় করুন। আপনি বর্ত্তমান থাকিতে আমার সাধ্যই বা কি কথাই বা কি?”

 মাবিয়া রােষভরে উঠিয়া যাইতে উদ্যত হইলেন, বৃদ্ধা মহিষী হস্ত ধরিবামাত্র অমনি বসিয়া পড়িলেন ও বলিতে লাগিলেন, “পাপী আর নারকীরা ওকার্য্যে যোগ দিবে। আমি ওকথা আর শুনিতে চাই না। তুমি আর ওকথা বলিয়া আমার কর্ণকে কলুষিত করিও না। আপনার জিহ্বাকে ওপাপ কথায় আর অপবিত্র করিও না। ভাবিয়া দেখ দেখি, ধর্ম্ম-পুস্তকের উপদেশ কি? পরস্ত্রীর প্রতি কুভাবে যে একবার দৃষ্টি করিবে, কোন প্রকার কুভাবের কথা মনােমধ্যে যে একবার উদিত করিবে, তাহারও প্রধান নরক ‘জাহান্নামে’ বাস হইবে। আর ইহকালের বিচার ত দেখিতে পাইতেছি। লৌহদণ্ড দ্বারা শত আঘাতে পরস্ত্রীহারীর অস্থি চূর্ণ, চর্ম্ম ক্ষয় করিয়া জীবনান্ত করে। ইহা কি একবারও এজিদের মনে হয় না? প্রজার ধন, প্রাণ, মান, জাতি, এসমুদয়ের রক্ষাকর্ত্তা রাজা। রাজার কর্ত্তব্য কর্ম্মই তাহা। এই কর্ত্তব্য অবহেলা করিলে রাজাকে ঈশ্বরের নিকট দায়ী হইতে হয়, পরিণামে নরকের তেজোময় অগ্নিতে দগ্ধীভূত হইয়া ভস্মসাৎ হইতে হয়। তাহাতেও নিস্তার নাই। সে ভস্ম হইতে পুনরায় শরীর গঠিত হইয়া পুনরায় শাস্তিভােগ করিতে হয়। এমন গুরু পাপের অনুষ্ঠান করা দূরে থাকুক, শুনিতেও পাপ। এজিদ্ আত্মবিনাশ করিতে চায় করুক, তাহাতে দুঃখিত নহি। এমন শত এজিদ—শত কেন সহস্র এজিদ এই কারণে প্রাণত্যাগ করিলেও মাবিয়ার চক্ষে এক বিন্দু জল পড়া ত দূরে থাকুক, বরং সন্তুষ্ট হৃদয়ে সে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিবে। একটি পাপী জগৎ হইতে বহিস্কৃত হইল বলিয়া ঈশ্বরের সমীপে এই মাবিয়া সেই জগৎ-পিতার নামে সহস্র সহস্র সাধুবাদ সমর্পণ করিবে। পুত্রের উপরােধে, কি তাহার প্রাণরক্ষার কারণে ঈশ্বরের বাক্য লঙ্ঘন করিয়া মাবিয়া কি মহাপাপী হইবে, তুমি কি ইহাই মনে কর, মহিষি? আমার প্রাণ থাকিতে তাহা হইবে না, মাবিয়া জগতে থাকিতে তাহা ঘটিবে না, কখনই না।”

 বৃদ্ধা মহিষী একটু অগ্রসর হইয়া মহারাজের হস্ত দৃঢ়রূপে ধারণ করিয়া কাতরভাবে বলিতে লাগিলেন, “দেখুন মহারাজ! এজিদ যে ফাঁদে পড়িয়াছে,