পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২০২

কোন্ বিপক্ষ যোদ্ধা আমাদের সম্মুখে অগ্রসর হইতে পারে? দেখার দিন, কথার দিন, বিশ্রামের দিন, ঈশ্বরপ্রসাদে যদি পাই, তবে মনের আনন্দে আপনার সেবা করিব। হোসেনের বিপদ চিরকাল থাকিবে না। কিন্তু এমন দিন পাইয়া আপনি আর সময় নষ্ট করিবেন না। এমন দিন আপনি আর পাইবেন না। এমন সময় কি বিলম্ব করা উচিত? ছিঃ। ছিঃ! বীরপুরুষ!—তোমাকে ছিঃ! ছিঃ! শত্রু যুদ্ধার্থী হইয়া অপেক্ষা করিতেছে, তুমি কিনা কাপুরুষের মত অবরোধপুরে আসিয়া অবরোধ-বাসিনী কুলবালার মুখ দেখিতে অভিলাষী হইয়াছ! ছিঃ তোমাকে।”

 অশ্ব হইতেই নতশিরে সাধ্বী সতীর কপোল চুম্বন করিয়া আবদুল ওহাব আর তাঁহার দিকে ফিরিয়াও চাহিলেন না। সতীর মিষ্ট ভর্ৎসনায় অন্তরে লজ্জিত হইয়া সজোরে অশ্বে কশাঘাত করিয়া তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রত্যাবর্ত্তন করিলেন; শত্রুগণকে সম্বোধন করিয়া বলিতে লাগিলেন, “রে বিধর্ম্মী কাফেরগণ! ভাবিয়াছিলি যে, আবদুল ওহাব পলাইয়াছে? আবদুল ওহাব পলায় নাই। ঈশ্বরের নামে অতি অল্প সময়ের জন্য এই জগৎ দেখিতে আমি তোদের অবসর দিয়াছিলাম। আয় দেখি, কত জনে আবদুল ওহাবের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে আসিবি, আয়?”

 আবদুল ওহাবের মাতা পুত্রের অজ্ঞাতে যুদ্ধক্ষেত্রের নিকট যাইয়া তাহার যুদ্ধ দেখিতে লাগিলেন। পূর্ব্বেই সেনাপতি ওমর সকলকেই বলিয়া রাখিয়াছিলেন যে, আবদুল ওহাব কোন কারণ বশতঃ ফিরিয়া গিয়াছে, এখনই আবার আসিবে। এবার সকলে একত্র হইয়া আবদুল ওহাবকে আক্রমণ করিতে হইবে। যাহার যে অস্ত্র আয়ত্ত আছে, সে সেই অস্ত্র আবদুল ওহাবের প্রতি নিক্ষেপ করিবে।

 রণক্ষেত্রে একবারে একযোগে বহুসংখ্যক সৈন্য মওলাকারে চতুর্দ্দিকে ঘুরিয়া একেশ্বর আবদুল ওহাবের প্রতি অস্ত্র বর্ষণ করিতে লাগিল। বীরবর আবদুল ওহাব শক্রবেষ্টিত হইয়া দুই হস্তে অসিচালনা করিতে লাগিলেন। এজিদের সৈন্যের অন্ত নাই; কত মারিবেন! শেষে শত্রুপক্ষের আঘাতে আবদুল ওহাবের মস্তক দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া দূরে বিনিক্ষিপ্ত হইল।