পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২০৪

পদে আবদুল ওহাবের অশ্বপৃষ্ঠে আরােহণ করিলেন। হােসেন অনেক অনুনয় বিনয় করিয়া নিষেধ করিলেন, তিনি কিছুতেই শুনিলেন না। পুত্রমস্তক কোলে করিয়াই অশ্বপৃষ্ঠে যুদ্ধক্ষেত্রে আসিয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিলেন, “কোন কাফের, কোন্ পাপাত্মা, কোন শৃগাল আমার পুত্রের মস্তক দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়াছে? ঈশ্বরের দোহাই, এই যুদ্ধক্ষেত্রে একবার আসিয়া সেই পাপাত্মা, সেই পিশাচ, সেই কাফের আমার সম্মুখে দেখা দিক্‌।”

 ‘ঈশ্বরের দোহাই’ শুনিয়া আবদুল ওহাব-হন্তা যুদ্ধক্ষেত্রে আসিয়া দর্পের সহিত বলিতে লাগিল, “আমারই এই শাণিত অস্ত্রে আবদুল ওহাবের মস্তক সেই পাপদেহ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়াছে।” আর কোন কথা হইল না। আবদুল ওহাব-জননী পুত্র-ঘাতককে দেখিয়া সক্রোধে আবদুল ওহাবের মস্তক এমন জোরে তাহার মস্তক লক্ষ্য করিয়া মারিলেন যে, ঐ আঘাতেই কাফেরের মস্তক ভগ্ন হইয়া মজ্জা নির্গত হইতে লাগিল! তাহার তখনই পঞ্চত্বপ্রাপ্তি।

 এই ঘটনা দেখিয়া ওমর মহারােষে আবদুল ওহাবের জননীর চতুর্দ্দিকে সৈন্য বেষ্টন করিলেন। বৃদ্ধা বলিতে লাগিলেন, “বৎসগণ! তােমাদের মঙ্গল হউক। আমার জীবনে মায়া নাই। পুত্রশােক নিবারণ করিবার জন্য এই বৃদ্ধ বয়সে যুদ্ধক্ষেত্রে আসিয়াছি। তােমরা আমাকে নিপাত কর। যে পথে আমার আবদুল ওহাব গিয়াছে, আমিও সেই পথে যাই। কিন্তু আকাশে যদি কেহ বিচারকর্ত্তা থাকেন, তিনি তােমাদের বিচার করিবেন।” অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আবদুল ওহাব-জননী শত্রুহস্তে প্রাণত্যাগ করিয়া স্বপ্নবাসিনী হইলেন।

 আবদুল ওহাবের মাতা প্রাণত্যাগ করিলে গাজী রহ্‌মান হােসেনের পদচুম্বন করিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হইলেন। তিনিও বহুসংখ্যক বিধর্ম্মীকে জাহান্নামে পাঠাইয়া শত্রুহস্তে শহীদ হইলেন। ক্রমে জাফর প্রভৃতি প্রধান প্রধান বীরগণ হােসেনের সাহায্যের জন্য শত্রুর সম্মুখীন হইয়া যুদ্ধ করিলেন, কিন্তু কেহই জয়লাভে কৃতকার্য্য হইতে পারিলেন না। প্রায় দেড় লক্ষ বিপক্ষসৈন্য বিনাশ করিয়া মদিনার প্রধান প্রধান যােদ্ধা মাত্রেই শত্রুহস্তে আত্মসমর্পন করিয়া স্বর্গধামে মহাপ্রস্থিত হইলেন।