পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৫
মহরম পর্ব্ব—পঞ্চবিংশ প্রবাহ

নিশ্চয় বলিতেছি, তুমিও এই মূল্যবান তরবারির আঘাত হইতে বঞ্চিত হইবে না। নিশ্চয় জানিও, অন্য তরবারিতে, অন্যের হস্তে তোমার মস্তক বিচ্ছিন্ন হইবে না। আক্ষেপ করিও না, তোমার এই মহামূল্য অসি তোমারই জীবন বিনাশের নির্দ্ধারিত অস্ত্র মনে করিও।”

 বর্জ্জক মহাক্রোধে বর্ষা ঘুরাইয়া বলিতে লাগিলেন, “কাসেম! তোমার বাকচাতুরী এই মুহূর্ত্তেই শেষ করিতেছি। তুমিও নিশ্চয় জানিও, বর্জ্জকের হস্ত হইতে তোমার রক্ষা নাই।” এই বলিয়া বর্জ্জক সজোরে বর্শা নিক্ষেপ করিলেন। কাসেম বর্ম্ম দ্বারা বর্শাঘাত ফিরাইয়া বর্জ্জকের বক্ষঃ লক্ষ্য করিয়া বর্শা উত্তোলন করিতেই বর্জ্জক লঘুহস্তের প্রভাবে কাসেমকে পুনরায় বর্শাঘাত করিলেন। বীরবর কাসেম বিশেষ চতুরতার সহিত বর্জ্জকের বর্শা ফিরাইয়া আপন বর্শা দ্বারা বর্জ্জককে আঘাত করিলেন। উভয় বীর বহুক্ষণ বর্শাযুদ্ধ করিয়া শেষে উভয়েই তরবারি ধারণ করিলেন। তরবারির ঘাত-প্রতিঘাতে উভয়ের বর্ম্ম হইতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হইতে লাগিল। কাসেমকে ধন্যবাদ দিয়া বর্জ্জক বলিতে লাগিলেন, “কাসেম। আমি রুম, শাম, মিশর, আরব প্রভৃতি বহু দেশে বহু যোদ্ধর তরবারিযুদ্ধ দেখিয়াছি, কিন্তু তোমার ন্যায় তরবারিধারী বীর কুত্রাপি কখনও আমার নয়নগোচর হয় নাই। ধন্য তোমার শিক্ষাকৌশল! যাহা হউক, কাসেম! এই আমার শেষ আঘাত। হয় তোমার জীবন, না হয় আমার জীবন—এই শেষ কথা বলিয়া বর্জ্জক কাসেমের শির লক্ষ্য করিয়া তরবারি আঘাত করিলেন। কাসেম সে আঘাত তাচ্ছিল্যভাবে বর্ম্মে উড়াইয়া দিয়া বর্জ্জক সরিতে না সরিতেই তাঁহার গ্রীবাদেশে অসি প্রয়োগ করিলেন। বীরবর কাসেমের আঘাতে বর্জ্জকের শির রণক্ষেত্রে গড়াইয়া পড়িল। এই ভয়াবহ ঘটনা দৃষ্টে এজিদের সৈন্যমধ্যে মহা হুলস্থূল পড়িয়া গেল।

 বর্জ্জেকের নিপাত দর্শনে এজিদের সৈন্যমধ্যে কেহই আর সমরাঙ্গণে আসিতে সাহসী হইল না। কাসেম অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত অপেক্ষা করিয়া বিপক্ষদিগকে দেখিতে না পাইয়া একেবারে ফোরাত-তীরে উপস্থিত হইলেন। নদী-রক্ষকেরা কাসেমের অশ্বপদধ্বনি শ্রবণে মহা ব্যতিব্যস্ত