পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২১৬

হইয়া মহাশক্ষিত হইল। কাসেম কাহাকেও কিছু বলিলেন না। তরবারি, তীর, নেজা, বল্লম,—যাহার দ্বারা যাহাকে মারিতে সুবিধা পাইলেন, তাহারি দ্বারা তাহাকে ধরাশায়ী করিয়া ফোরাতকূল উদ্ধারের উপক্রম করিলেন। ওমর, সীমার ও আবদুল্লাহ্ প্রভৃতিরা দেখিলেন,—নদীকূলরক্ষীরা কাসেমের অস্ত্র-সম্মুখে কেহই টিঁঁকিতেছে না। ইহারা কয়েকজনে একত্র হইয়া সমর-প্রাঙ্গণের সমুদয় সৈন্যসহ কাসেমকে পশ্চাৎদিক হইতে ঘিরিয়া তাঁহার প্রতি শর নিক্ষেপ করিতে লাগিলেন। অনবরত তীর কাসেমের অঙ্গে আসিয়া বিদ্ধ হইতেছে; কাসেমের সে দিকে দৃক্‌পাত নাই; কেবল ফোরাতকূল উদ্ধার করিবেন—এই আশাতেই সম্মুখস্থ শত্রুগণকে সংহার করিতেছেন। কাসেমের শ্বেতবর্ণ অশ্ব তীরাঘাতে রক্তধারায় লােহিতবর্ণ হইয়াছে। শােণিতধারা অশ্বপদ বহিয়া মৃত্তিকা রঞ্জিত করিতেছে। ক্রমেই কাসেম নিস্তেজ হইতেছেন;—শােণিতপ্রবাহে চতুর্দ্দিকেই অন্ধকার দেখিতেছেন, শেষে নিরুপায় হইয়া অশ্ববল্গা ছাড়িয়া দিলেন। শিক্ষিত অশ্ব কাসেমের শরীরের অবসন্নতা বুঝিতে পারিয়া দ্রুতপদে শিবির-সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল; হাস্‌নেবানু ও সখিনা শিবিরমধ্য হইতে অশ্বপদধ্বনি শুনিতে পাইয়া বাহিরে আসিয়া দেখিলেন: কাসেমের পরিহিত শুভ্রবসন লােহিতবর্ণে রঞ্জিত হইয়াছে, শােণিতধারা অশ্বপদ বহিয়া পড়িতেছে। কাসেম অশ্ব হইতে নামিয়া সখিনাকে বলিলেন, “সখিনা! দেখ, তােমার স্বামীর শাহানা[১] পােষাক দেখ। আজ বিবাহ-সময়ে উপযুক্ত পরিচ্ছদে তােমাকে বিবাহ করি নাই, কাসেমের দেহবিনির্গত শােণিতধারে শুভ্রবসন লােহিত বর্ণে পরিণত হইয়া বিবাহবেশ সম্পূর্ণ করিয়াছে! এই বেশ তােমাকে দেখাইবার জন্যই বহু কষ্টে শত্রুদল ভেদ করিয়া এখানে আসিয়াছি। আইস, এই বেশে তােমাকে আলিঙ্গন করিয়া প্রাণ শীতল করি। সখিনা! আইস, এই বেশেই আমার মানসের চিরপিপাসা নিবারণ করি।”

 কাসেম এই কথা বলিয়াই সখিনাকে আলিঙ্গন করিবার নিমিত্ত হস্ত প্রসারণ করিলেন। সখিনাও অগ্রবর্ত্তিনী হইয়া স্বামীকে আলিঙ্গন করিলেন।


  1. লাল পোষাক