পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২২০

আমার শিরস্ত্রাণ কোথায়? (জোরে উঠিয়া) কৈ, আমার অর্থ কোথায়? এখনই অন্তর-জ্বালা নিবারণ করি।—শত্রু বধ করিয়া কাসেমের শোক ভুলিয়া যাই!” পাগলের মত এই সকল কথা বলিয়া হোসেন যুদ্ধসজ্জায় সজ্জিত হইতে চলিলেন।

 হোসেনের পুত্র আলী আক্‌বর করজোড়ে বলিতে লাগিলেন, “পিতঃ! এখনও আমরা চারি ভ্রাতা বর্ত্তমান। যদিও আমরা শিশু, তথাপি মরণে ভয় করি না। আমরা বর্ত্তমান থাকিতে আপনি অস্ত্র ধারণ করিবেন? আমাদের বাঁচিবার আশা ত একরূপ শেষই হইয়াছে। জল-পিপাসায়, আত্মীয়স্বজনের শোকাগ্নি-উত্তাপে জিহ্বা, কণ্ঠ, বক্ষ, উদর সকলই ত শুষ্ক হইয়াছে; এরূপ অবস্থায় আর কয় দিন বাঁচিব? নিশ্চয়ই মরিতে হইবে। বীর পুরুষের ন্যায় মরাই শ্রেয়ঃ। স্ত্রীলোকের ন্যায় কাঁদিয়া মরিব না।” এই কথা বলিয়া পিতৃচরণে প্রণাম করিয়া আলী আক্‌বর অশ্বে আরোহণ করিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে যাইয়া দ্বৈরথ যুদ্ধে কাহাকেও আহ্বান না করিয়া তিনি একেবারে ফোরাতকূল-রক্ষকদিগের প্রতি অস্ত্রবর্ষণ করিতে লাগিলেন। রক্ষীরা ফোরাতকূল ছাড়িয়া পলাইতে আরম্ভ করিল। এজিদের সৈন্যমধ্যে মহাহুলস্থূল পড়িয়া গেল। আলী আক্‌বর যেমন বলবান্, তেমনই রূপবান্ ছিলেন। আলী আক্‌বরের সুদৃশ্য রূপলাবণ্যের প্রতি যাহার চক্ষু পড়িল, তাহার অস্ত্র আর তাঁহার প্রতি আঘাত করিতে উঠিল না। যে দেখিল, সেই-ই আক্‌বরের রূপে মোহিত হইয়া তৎপ্রতি অস্ত্রচালনায় বিরত হইল। অস্ত্রচালনা দূরে থাকুক,—পিপাসায় আক্রান্ত, শীঘ্রই মৃত্যু হইবে, এই ভাবিয়াই অনেক বিধর্ম্মী দুঃখ করিতে লাগিল। আলী আক্‌বর বীরত্বের সহিত নদীকূলরক্ষীদিগকে তাড়াইয়া অশ্বপৃষ্ঠে থাকিয়াই ভাবিতেছেন: কি করি! সমুদয় শত্রু শেষ করিতে পারিলাম না! যাহারা পলাইতে অবসর পাইল না তাহারাই সম্মুখে দাঁড়াইল। ঐশ্বরী মায়ায় তাহাদের পরমায়ুও শেষ হইল। কিন্তু অধিকাংশ রক্ষীরাই প্রাণভয়ে নদীকূল ছাড়িয়া জঙ্গলে পলাইল। আমি এখন কি করি।’

 ঈশ্বরের মায়া বুঝিতে মানুষের সাধ্যমাত্র নাই। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ