তাঁহার লক্ষাধিক সৈন্য় লইয়া সেই সময়েই ফোরাত-তীরে আসিয়া আলী আক্বরকে ঘিরিয়া ফেলিলেন। তুমুল যুদ্ধ আরম্ভ হইল। জেয়াদের সৈন্য আলী আক্বরের তরবারির সম্মুখে শ্রেণীবদ্ধরূপে পড়িয়া যাইতে লাগিল। এ পর্যন্ত আলী আক্বরের অঙ্গে শত্রুপক্ষের কোন অস্ত্র নিক্ষেপ করিতে পারে নাই; কিন্তু আলী তাঁর সাধ্যানুসারে বিধর্ম্মীমস্তক নিপাত করিয়াও শেষ করিতে পারিলেন না। যাহারা পলাইয়ছিল, তাহারাও জেয়াদের সৈন্যের সহিত যোগ দিয়া আলী আক্বরের বিরুদ্ধে দাঁড়াইল। আক্বর সৈন্যচক্র ভেদ করিয়া দ্রুতগতিতে শিবিরে আসিলেন; পিতার সম্মুখীন হইয়া বলিতে লাগিলেন, “ফোরাতকূল উদ্ধার হইত; কিন্তু কুফা হইতে আবদুল্লাহ্ জেয়াদ লক্ষাধিক সৈন্য লইয়া এজিদের সৈন্যের সাহায্যার্থে পুনরায় নদীতীর বন্ধ করিয়া দাঁড়াইয়াছে। যে উপায়েই হউক, আমাকে এক পাত্র জল দিন, আমি এখনই জেয়াদকে সৈন্যসহ শমনভবনে প্রেরণ করিয়া আসি। এই দেখুন, আমার তরবারি কাফের-শোণিতে রঞ্জিত হইয়াছে। ঈশ্বরকৃপায় এবং আপনার আশীর্ব্বাদে আমার অঙ্গ কেহ এ পর্য্যন্ত একটিও আঘাত করিতে পারে নাই। কিন্তু পিপাসায় প্রাণ যায়।”
হোসেন বলিলেন, “আক্বর, আজ দশ দিন কেবল চক্ষের জল ব্যতীত এক বিন্দু জল চক্ষে দেখি নাই। সেই চক্ষের জলও শুষ্ক হইয়া গিয়াছে। জল কোথায় পাইব বাপ্?”
আলী আক্বর বলিলেন, “আমার প্রাণ যায়, আর বাঁচি না!”—এই বলিয়া পিপাসার্ত্ত আলী আক্বর ভূমিতলে শয়ন করিলেন। হোসেন বলিতে লাগিলেন, “হে ঈশ্বর। জলে মানব-জীবন রক্ষা হইবে বলিয়া জলের নাম তুমি দিয়াছ ‘জীবন’!—জগদীশ্বর! সেই জীবন আজ দুর্ল্লভ। জগৎ-জীবন! সেই জীবনের জন্য মানব-জীবন আজ লালায়িত। কার কাছে জীবন ভিক্ষা করি দয়াময়? আশুতোষ! তোমার জগৎ-জীবন নামের কৃপায় শিশু কেন বঞ্চিত হইবে, জগদীশ?—করুণাময়। তুমি জগৎ সৃষ্টি করিয়াছ। ভূগোলে বলে, স্থলভাগের অপেক্ষা জলভাগই অধিক।