আমরা এমনই পাপী যে, জগতের অধিকাংশ পরিমাণ যে জল, যাহা পশু পক্ষীরাও অনায়াসে লাভ করিতেছে, তাহা হইতেও বঞ্চিত হইলাম! ষষ্টি সহস্র লোকের প্রাণ বোধ হয়, এই জলের জন্যই বিনাশ হইল! দয়াময়! সকলই তোমার মহিমা!”
আলী আক্বরের নিকটে যাইয়া হোসেন বলিলেন, “আক্বর। তুমি আমার এই জিহ্বা আপন মুখের মধ্যে দিয়া একটু শান্তিলাভ কর। জিহ্বাতে যে রস আছে, উহাতে যদি তোমার পিপাসার কিছু শাস্তি হয়, দেখ।—বাপ! অন্য জলের আশা আর করিও না।”
আলী আক্বর পিতার জিহ্বা মুখের মধ্যে রাখিয়া কিঞ্চিৎ পরেই বলিলেন, “প্রাণ শীতল হইল, পিপাসা দূর হইল। ঈশ্বরের নাম করিয়া আবার চলিলাম।”
এই বলিয়া আলী আক্বর পুনরায় অশ্বে আরোহণ পূর্ব্বক সমরক্ষেত্রে উপস্থিত হইয়া যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বহু শত্রু নিপাত করিয়া ফেলিলেন। তদ্দর্শনে জেয়াদ এবং ওমর প্রভৃতি পরামর্শ করিলেন, আলী আক্বর আর ক্ষণকাল এইরূপ যুদ্ধ করিলেই আমাদিগকে এক প্রকার শেষ করিবে। আলী আক্বরকে যে কোন উপায়েই হউক, বিনাশ করিতে হইবে। সম্মুখযুদ্ধে আক্বরের নিকট অগ্রসর হইয়া কেহই জয়লাভ করিতে পারিবে না। এস, দূর হইতে গুপ্তভাবে আমরা কয়েকজন উহাকে লক্ষ্য করিয়া বিষাক্ত শর সন্ধান করি, অবশ্যই কাহারও না কাহারও শর আক্বরের বক্ষ ভেদ করিবেই করিবে।” এই বলিয়াই প্রধান প্রধান সৈন্যাধ্যক্ষেরা বহুদূর হইতে শর নিক্ষেপ করিতে লাগিলেন! আলী আক্বর কাফেরবধে একেবারে জ্ঞানশূন্য হইয়া মাতিয়া গিয়াছেন। শরসন্ধানীরা শর নিক্ষেপ করিতেছে। একটি বিষাক্ত শর আলী আক্বরকে বক্ষে বিদ্ধ করিয়া পৃষ্ঠদেশ পার হইয়া গেল। আলী আক্বর সমুদয় জগৎ অন্ধকার দেখিতে লাগিলেন। তাঁহার পিপাসাও অধিকতর বৃদ্ধি পাইল। জলের জন্য তিনি কাতরস্বরে বারবার পিতাকে ডাকিতে লাগিলেন। সম্মুখে তিনি যেন দেখিতে পাইলেন, তাঁহার পিতৃব্য জলপাত্র হস্তে করিয়া