পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৩
মহরম পর্ব্ব—ষড়বিংশ প্রবাহ

ভয়ের সঞ্চার হইল। সভয়ে চতুর্দ্দিকে চাহিয়া দেখিলেনঃ আবদুল্লাহ জেয়াদ, ওমর, সীমার এবং আর কয়েকজন সেনা তাহার চতুর্দ্দিক ঘিরিয়া যাইতেছে। সকলের হস্তেই তীরধনু! ইহা দেখিয়াই তিনি চমকাইয়া উঠিলেন!—যে সমুদয় বসনের মাহাত্মে তিনি নির্ভয়হৃদয়ে ছিলেন—তৎসমুদয় এখন পরিত্যাগ করিয়াছেন; তরবারি, তীর, নেজা, বল্লাম, বর্ম্ম, খঞ্জর কিছুই তাঁহার সঙ্গে নাই, কেবল দুখানি হাত মাত্র সম্বল। অন্যমনস্কভাবে তিনি দুই এক পদ করিয়ায় চলিলেন; শত্রুরাও পূর্ববৎ ঘিরিয়া তাহার সঙ্গে সঙ্গে চলিল।

 কিছু দূরে যাইয়া হোসেন আকাশ পানে দুই তিন বার চাহি ভূতলে পড়িয়া গেলেন। বিষাক্ত তীরবিদ্ধ ক্ষতস্থানের জ্বালা, পিপাসার জ্বালা, শোকতাপ, বিয়োগ-দুঃখ,—নানা প্রকার জ্বালায় তিনি অধীর হইয়া পড়িলেন। জেয়াদ এবং ওমর প্রভৃতি ভাবিল যে, হোসেনের মৃত্যুই হইয়াছে—কিছুক্ষণ পরে হোসেনের হস্তপদ-সঞ্চালনের ক্রিয়া দেখিয়া তাহার যে নিশ্চয়ই মৃত্যু হইয়াছে—ইহা আর মনে করিল না; তাঁহার মৃত্যু নিকটবর্তী জ্ঞান করিয়া কিঞ্চিৎ দূরে তাহারা স্থিরভাবে দণ্ডায়মান রহিল।—হোসেন ভূমিতলে পড়িয়া রহিয়াছেন। সীমারের সামান্য শরাঘাতে তাদৃশ মহাবীরের প্রাণ বিয়োগ অসম্ভব ভাবিয়া কেহই হোসেনের নিকট যাইতে সাহসী হইল না। কেহ কেহ অনুমান করিতেছে—নিশ্চয়ই মৃত্যু! মুখেও বলিতেছে যে, “হোসেন আর নাই। চল, হোসেনের মস্তক কাটিয়া আনি।” কিন্তু দুই এক পদ যাইয়া আর কাহারও অগ্রসর হইতে সাহস হয় না। হোসেনের মৃত্যু-সংবাদ এজিদের নিকট লইয়া গেলে কোন লাভ নাই। এজিদ সে সংবাদ বিশ্বাস করিয়া কখনই পুরস্কার দান করিবেন না! মস্তক চাই!'—ভাবিয়া ভাবিয়া সীমার বলিল, “জেয়াদ! তুমি ত খুব সাহসী; তুমিই মৃত হোসেনের মাথা কাটিয়া আন।”

  জেয়াদ বলিলেন, “হোসেনের মাথা কাটিতে আমার হস্ত স্থির থাকিবে না, সাহসও হইবে না। আমি উহা পারিব না। যদি দুর্বলতা বশতঃ হোসেন ধরাশায়ী হইয়া থাকে, কিংবা অন্য কোন অভিসন্ধি করিয়া মরার ন্যায় মাটিতে পড়িয়া থাকে, আমাকে হাতে পাইলে, বল ত