পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৫
মহরম পর্ব্ব—ষড়বিংশ প্রবাহ

কি পরকাল বলিয়া কিছুই মনে নাই? এমন গুরুতর পাপের জন্য তুমি কি একটুও ভয় করিতেছ না?”

 সীমার বলিল, “আমি কাহাকেও ভয় করি না!—আমি পরকাল মানি না; নূরনবী মোহাম্মদ কে? আমি তাহাকে চিনি না। বুকের উপর বসিয়াছি বলিয়া পাপের ভয় দেখাইতেছ, সে ভয় আমার নাই। কারণ, আমি এখনই খঞ্জরে তোমার মাথা কাটিয়া লইব। যাহার মাথা কাটিয়া লক্ষ টাকা পুরস্কার পাইব, তাহার বুকের উপর বসিতে আমার পাপ কি? সীমার পাপের ভয় করে না।”

 “সীমার। আমি এখনই মরিব। বিষাক্ত তীরের আঘাতে আমি অস্থির হইয়াছি। বক্ষের উপর হইতে নামিয়া আমায় নিঃশ্বাস ফেলিতে দাও। একটু বিলম্ব কর? একটু বিলম্বের জন্য কেন আমাকে কষ্ট দিবে? আমার প্রাণ বাহির হইয়া গেলে মাথা কাটিয়া লইও। আমার দেহ যত খণ্ডে খণ্ডিত করিতে ইচ্ছা হয়, করিও! একবার নিঃশ্বাস ফেলিতে দাও। নিশ্চয়ই আমার মৃত্যু। এই কারবালা-প্রান্তরে হোসেনের জীবনের শেষ কার্য্য সমাপ্ত! তাহার জীবনের শেষ এই কারবালায়। ভাই সীমার! তুমি নিশ্চয়ই আমার মাথা কাটিয়া লইতে পারিবে। আমি আশাবাদ করিতেছি, এই কার্য্য করিয়া তুমি জগতে বিখ্যাত হইবে। ক্ষণকাল অপেক্ষা কর।

 অতি কর্কশস্বরে সীমার বলিল “আমি তোমার বুকের উপর চাপিয়া বসিয়াছি, মাথা না কাটিয়া উঠিব না। যদি অন্য কোন কথা থাকে, বল। বুকের উপর হইতে একটুও সরিয়া বসিব না।”—এই বলিয়া সীমার আরও দৃঢ়রূপে চাপিয়া বসিয়া হোসেনের গলায় খঞ্জর চালাইতে লাগিল।

 হোসেন বলিতে লাগিলেন, “সীমার। আমার প্রাণ এখনই বাহির হইবে। একটু বিলম্ব করা-এই কষ্টের উপর আর কষ্ট দিয়া আমাকে মারিও না!”

 সীমার তীক্ষ্মধার খঞ্জর হোসেনের গলায় সজোরে চালাইতে লাগিল, কিন্তু চুল পরিমাণ স্থানও কাটতে পারি না। সে বার বার খরের প্রতি