পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহরম পর্ব্ব—দ্বিতীয় প্রবাহ

ছিলেন, কোন বিষয়েই তাঁহার উচ্চ আশা ছিল না। যে অবস্থাতেই হউক, সতীত্বধর্ম্ম পালন করিয়া সংসারযাত্রা নির্ব্বাহ করাই তাঁহার আন্তরিক ইচ্ছা ছিল। ধর্ম্ম-চিন্তাতেও তিনি উদাসীন ছিলেন না। আবদুল জব্বার সুশ্রী পুরুষ না হইলেও তাঁহার প্রতি তিনি ভক্তিমতী ছিলেন। স্বামীপদ-সেবা করাই স্বর্গলাভের সুপ্রশস্ত পথ, তাহা তাঁহার হৃদয়ে সর্ব্বদা জাগরূক ছিল। লৌকিক সুখে তিনি সুখী হইতে ইচ্ছা করিতেন না, ভালও বাসিতেন না; ভ্রমেও ধর্ম্মপথ হইতে এক পদ বিচলিত হইতেন না। আবদুল জব্বার নিজ অদৃষ্টকে ধিক্কার দিয়া সময়ে সময়ে এজিদের ঐশর্য্য ও এজিদের রূপলাবণ্যের ব্যাখ্যা করিতেন। তাহাতে সতী-সাধ্বী জনাব মনে মনে নিতান্ত ক্ষুন্ন হইতেন। নিতান্ত অসহ্য হইলে বলিতেন,—“ঈশ্বর যে অবস্থায় যাহাকে রাখিয়াছেন তাহাতেই পরিতৃপ্ত হইয়া কায়মনে তাহার নিকট কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা কর্ত্তব্য। পরের ধন, পরের রূপ দেখিয়া নিজ অদৃষ্টকে ধিক্কার দেওয়া বুদ্ধিমানের কর্ত্তব্য নহে। দেখুন, জগতে কত লোক যে, আপনার অপেক্ষা দুঃখী ও পর-প্রত্যাশী আছে, তাহা গণনা করা যায় না। ঈশ্বরের বিবেচনা অসীম। মানুষের সাধ্য কি যে, তাঁহার বিবেচনায় দোষার্পণ করিতে পারে? তবে অজ্ঞ মনুষ্যগণ না বুঝিয়া অনেক বিষয়ে তাঁহার কৃতকার্য্যের প্রতি দোষারোপ করে। কিন্তু তিনি এমনি মহান, এমনি বিবেচক, যাহার যাহা সম্ভবে, যে যাহা রক্ষা করিতে পারিবে, তিনি তাহাকে তাহাই দিয়াছেন। তাঁহার বিবেচনায় তিনি কাহাকেও কোন বিষয়ে বঞ্চিত করেন না। কৃতজ্ঞতার সহিত তাঁহার গুণানুবাদ করাই আমাদের সর্ব্বতোভাবে কর্ত্তব্য।”

 স্ত্রীর কথায় আবদুর জব্বার কোন উত্তর করিতেন না, কিন্তু কথাগুলি বড় ভাল বোধ হইত না। তাঁহার মত এই যে, ধনসম্পত্তিশালী না হইলে জগতে সুখী হওয়া যাইতে পারে না; সুতরাং তিনি সর্ব্বদাই অর্থচিন্তায় ব্যস্ত থাকিতেন, ব্যবসায়-বাণিজ্যে যখন যাহা সুবিধা মনে করিতেন তখন তাহাই অবলম্বন করিতেন। নিকটস্থ বাজারে অন্যান্য ব্যবসায়িগণের নিকট প্রায় সর্ব্বদা উপস্থিত থাকিয়া তিনি অর্থোপার্জ্জনের পথ