পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৩
উদ্ধার পর্ব্ব—প্রথম প্রবাহ

 মারওয়ানকে লক্ষ্য করিয়া সখিনা বলিতে লাগিলেন, “রে বিধর্মী কাফের! তুই এখানে কেন? দূর হ! সখিনার সম্মুখ হইতে দূর হ! তুই কি আশায় এখানে আসিয়াছিস্? দূর হ কাফের, দূর হ! এ পবিত্র শিবির হইতে দূর হ! ঐ দেখ্‌! যদি চক্ষু থাকে, তবে ঐ দেখ,! শূন্যে চাহিয়া দেখ,?—সাহানা বেশ! সেই নয়নমুগ্ধকারী সাহানা বেশ! লোহিত-রক্ত-রঞ্জিত সেই সাহানা বেশ! সেই সাহানা বেশ! শত্রু-অস্ত্রে ক্ষতবিক্ষত হইয়া সাহানা বেশ! ওরে নরাধম বর্ব্বর! চণ্ডালের অমৃতে আশা? শয়তানের বেহেশ্‌তে আশা? ঘোর নারকীর জেন্নাতে আশা? মহাপাতকীর হুরে আশা? দেখ্‌! এই দেখ্‌, কাসেম যার প্রাণ, সে এখন তারই নিকটে!—যেখানে কাসেম, সেইখানে সখিনা, রক্তমাখা সুতীক্ষ খঞ্জর—কাসেমের হস্তের খ—”এই বলিয়া সখিনা হস্তস্থিত খঞ্জর সুকোমল বক্ষে সজোরে বসাইয়া পৃষ্ঠ পার করিয়া দিলেন। হায় রে রুধির-ধারা! খঞ্জরের অগ্রভাগ বহিয়া বহিয়া শোণিতের ধারা ছুটিল। সখিনা কাসেমের মৃতদেহ পার্শ্বে অর্ধমুকুলিত ছিলতার ন্যায় ধরাশায়িনী হইলেন।[১]

 মারওয়ান নিস্তব্ধ। অন্য অন্য যোদ্ধাগণ, যাহারা সখিনার—সাধ্বীসতী সখিনার কীর্ত্তি স্বচক্ষে দেখিল, তাহারা সকলেই নিস্তব্ধ এবং স্থিরভাবে দণ্ডায়মান! পদপরিমাণ ভূমিও অগ্রসর হইতে আর তাহারা সাহসী হইল না।

 মারওয়ান বলিতে লাগিল, “ভ্রাতাগণ! হোসেন পরিবারের প্রতি কেহ কোন প্রকার অত্যাচার করিও না। সাবধান! তাহাদিগকে লক্ষ্য করিয়া কেহ কোন কথা মুখে আনিও না। প্রত্যক্ষ প্রমাণ স্বচক্ষেই ত দেখিলে! কি অসীম সাহস! কি অসীম ক্ষমতা কি আশ্চর্য! বিশেষ লক্ষ্য করিয়া দেখ, ইহাদের এখনকার ভাবভঙ্গি—মনের ভাবগতিক বড় ভয়ানক! সাবধানে কথাবার্তা কহিবে। দেখ, ভাবটি সহজ ভাব নহে, দেখিলেই বোধ হয়, ইহারা সন্তোষসহকারে কোথায় যেন যাইতে ব্যগ্র হইয়াছেন! দুঃখের চিহ্নমাত্র নাই! বিয়োগ, শোক, বেদনা, যন্ত্রণা,

  1. সতী-সাধ্বী সখিনার আত্মঘাতিনী হওয়া সম্বন্ধে শাস্ত্রমতে অনৈক্য আছে।